এলএনজি, ভোজ্যতেল ও সার কিনবে সরকার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলএনজি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ইউরিয়া সার, সৌদি আরব থেকে ডিএপি সার এবং স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভোজ্যতেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আরো কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান মেসার্স পসকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের কাছ থেকে এ এলএনজি কিনতে ব্যয় হবে ৬০৮ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ১৫২ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪৫ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি। মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস লিমিটেডের কাছ থেকে এ তেল কিনতে ব্যয় হবে ৭১ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৫৯ টাকা ৫০ পয়সা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কাছ থেকে এ সার কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৭৭ দশমিক ৫০ ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মাদেন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৩৪৫ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৭০৯ ডলার।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়াল গেজ রেলসংযোগ নির্মাণের (বাংলাদেশ অংশ) ব্যয় ৯ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৩ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের ডুয়াল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণসংক্রান্ত কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় ১৪১ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকায় পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা জোনের ‘সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ (জেড-৭৬০২) এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী (জেড-৭৬১৭) মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউপি ৫-এর আওতায় ‘কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী সড়কের উন্নয়নে কালীগঞ্জ ফুলতলা মোড় থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর চৌরাস্তা’ পর্যন্ত টেন্ডার কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছেন জহিরুল লিমিটেড। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৪ টাকা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সড়ক জোনের অধীন সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ডব্লিউপি ৩ প্যাকেজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এম এম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৫২২ টাকা। একই প্রকল্পের ডব্লিউপি ৬ প্যাকেজের ১৪৪ কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ৯২০ টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ওহিদুজ্জামান চৌধুরী ও মেসার্স জন্মভূমি নির্মাতা (জেওএন) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া বৈঠকে ‘কুমিল্লা সড়ক বিভাগাধীন চারটি জেলা মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-৩ কাজের পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় আরো তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের হিমছড়ি থেকে রেজু খাল পর্যন্ত কেবল কার নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে টিসিবি কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কিংবা স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা অন্য কোনো ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণে পণ্য সংগ্রহের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ৩০ জুন নির্ধারণের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।