একনেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন
দেশে অপরিশোধিত আমদানীকৃত তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ (ইআরএল-২)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকার পর অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়ে এসে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএলের নিজস্ব জায়গায়ই নতুন এ ইউনিট স্থাপন করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। এছাড়া সভায় আরো ২১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গতকাল পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৩০ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। প্রকল্প ঋণ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে দেশে প্রথম ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড স্থাপন করা হয়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তেল পরিশোধন কোম্পানিটি ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম। বর্তমানে ইআরএল দেশের পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করে। দেশের বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয় সরকারকে। অন্যদিকে ইউরো-৫ মানের পণ্য প্রবর্তনের ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের স্পেসিফিকেশনও খুব কঠোর হয়ে উঠেছে। ফলে অধিক সক্ষমতার তেল পরিশোধনে নতুন কোম্পানি প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে আরো ৩০ টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে। ফলে বছরে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৫ লাখ টনে।
প্রকল্পের বিষয়ে ইআরএল সূত্রে জানা যায়, দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ, পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানিনির্ভরতা হ্রাস, জ্বালানি নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ়করণ এবং দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল প্রক্রিয়াকরণ করে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনে এটি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বৈদেশিক ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকার বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে আসছিল। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পরও কোনো দাতা সংস্থা ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় এবার নিজস্ব অর্থায়নে প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। শুরুর দিকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও এখন সেটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। ফ্রান্সের টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন সম্পন্ন করে। অন্তত ১১ বার প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হয়েছে। একসময় বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপও প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এস আলম গ্রুপকে প্রকল্প থেকে বাদ দেয়।
অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ২০টি প্রসেসিং ইউনিট এবং ১৮টি ইউটিলিটি ও অফসাইট ইউনিট স্থাপন, ভূমি উন্নয়ন, সড়ক রি-রুটিং, যানবাহন ক্রয়সহ অন্যান্য কাজ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ২১ হাজার ২৭৭ কোটি এবং ইআরএল দেবে ১৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ২০৩০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত।
একনেকে ২২টি প্রকল্প অনুমোদন
চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সপ্তম একনেক সভায় মোট ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ২২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন প্রকল্প রয়েছে ১৪টি। সংশোধিত প্রকল্প পাঁচটি এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিনটির। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে নতুন, সংশোধিত ও মেয়াদ বাড়ানো প্রকল্প রয়েছে।


