বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রকাশ

গঠন প্রক্রিয়া, কার্যক্রম, নিবন্ধন, তদারকি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এতে বিশেষভাবে বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যপদ, নির্বাচন, বার্ষিক সাধারণ সভা, নিরীক্ষা এবং সংগঠন বাতিলসংক্রান্ত প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠন পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমের হাতে আসা এ গেজেটটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন বিধিমালায় সদস্যপদ, নির্বাচন, বার্ষিক সাধারণ সভা, নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল এবং সংগঠন বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়িক পরিবেশে পেশাদারত্ব ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে, ফলে সরকারি তদারকি আরো কার্যকর হবে। বিধিমালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) মতো সংগঠনের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পরিষদের গঠন ও নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ধরনের সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদে মোট ৪৬ জন পরিচালক থাকবেন, যার মধ্যে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহসভাপতি এবং দুইজন সহসভাপতির বিধান করা হয়েছে।
নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট কোটার ভিত্তিতে পরিচালক নির্বাচন করা হবে। চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন ও সাবস্ক্রাইবার গ্রুপ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংগঠনগুলোকে নবায়ন সনদ, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী এবং সদস্যপদ ফি জমা দিতে হবে।
পরিচালক পদপ্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কার্যকরী সদস্য হতে হবে এবং পূর্ববর্তী সময়ে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এমন প্রমাণ থাকতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ পরিষদের সদস্য হতে নবায়ন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল এবং আর্থিক দায়মুক্তির শর্ত পূরণ আবশ্যক। নতুন বিধিমালায় নির্বাচন পরিচালনার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বাধীন নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জাল বা ভুয়া কাগজপত্র দাখিল এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম বা প্রভাব খাটানোর প্রমাণ মিললে সদস্যপদ বাতিল অথবা নির্বাচনী প্রার্থিতা স্থগিত করার বিধান রাখা হয়েছে। বিশেষত ঋণ খেলাপি ও কর ফাঁকিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নবায়ন সনদ, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণীসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জমা দিতে হবে। পরিচালক পদে প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের কার্যকর সদস্য হতে হবে এবং পূর্ববর্তী সময়গুলোতে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এমন প্রমাণ থাকতে হবে।
সাধারণ পরিষদ (জেনারেল বডি) গঠন : বিধিমালায় সাধারণ পরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতাগুলোও নতুনভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে। সংগঠনের সদস্যপদ নবায়ন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল, আর্থিক দায়মুক্তি সনদ এবং সদস্যপদ ফি প্রদান নিয়মিতভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কোনো সদস্য সংগঠন যদি এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি সাধারণ পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ : নতুন বিধিমালায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র নির্বাচন বোর্ড গঠন করার কথা বলা হয়েছে, যারা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। তাছাড়া জাল বা ভুয়া কাগজপত্র দাখিল, ভোটার তালিকায় অনিয়ম অথবা প্রভাব খাটানোর অভিযোগের প্রমাণ মিললে সদস্যপদ বাতিল কিংবা নির্বাচনের প্রার্থিতা স্থগিত করার বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।