শিরোনাম

South east bank ad

সারা দেশে অচল ব্যবসা-বাণিজ্য

 প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কনজুমার প্রোডাক্টস

সারা দেশে অচল ব্যবসা-বাণিজ্য

এমনিতেই সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। উদ্যোক্তারা হতাশায়, আস্থাহীনতায়। বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে স্থবিরতা। পুরো অর্থনীতি যখন কঠিন সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে, তখনই রাজস্বকর্মীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা কঠিন আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য।
আমদানি পণ্য খালাস হচ্ছে না, জাহাজে উঠছে না রপ্তানিমুখী পণ্যও। নেই বন্দরে হাঁকডাক, ব্যস্ততা। শুল্ক-কর আদায় হচ্ছে না। সারা দেশের কর অফিসেও নেই কোনো কার্যক্রম।
জমা হচ্ছে না আয়কর রিটার্ন। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অর্থবছরের শেষ সময়ে বিপুল অঙ্কের বকেয়া রাজস্ব আদায়ের কথা থাকলেও আদায় হচ্ছে না তা-ও। মোট কথা পুরো রাজস্ব ব্যবস্থাপনা স্থবির।
এদিকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এই সংকটের সমাধান চেয়েছেন। তাঁদের দাবি, রাজস্বকর্মীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ দিনে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতির অঙ্ক বাড়তেই থাকবে। এতে টান পড়বে পণ্যের সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহব্যবস্থায়। তাই সরকারকে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে হবে।
আর কর্মকর্তাদেরও দেশের স্বার্থে কাজে ফিরে যেতে আহবান জানিয়েছেন তাঁরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর বিভক্তির জেরে সংস্থার চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় তাঁরা গতকাল শনিবার প্রথমবারের মতো কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাঁরা সারা দেশে সংস্থার সব কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট ও আয়কর অফিসে কর্মবিরতি পালন করেন। এতে কোনো অফিসেই কাজকর্ম হয়নি। গ্রাহকরা সেবা নিতে পারেননি। সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, এক দিনেই তাঁদের অন্তত দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানান, আজ রবিবারও ফের কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছে ঐক্য পরিষদ।

দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই শাটডাউন অর্থনীতির জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। এটা আমাদের অর্থনীতির শ্বাসনালিকে একেবারে চেপে ধরার মতো। অর্থনীতি শ্বাস নিতে পারবে না। কারণ বাণিজ্য না হলে কারখানায় উৎপাদন হবে না, খামারে চাষ হবে না; এমনকি দোকানে পণ্য আসবে না। এনবিআর কাজ না করলে জাহাজে মাল ওঠানো যাবে না। আর নামালে সেটা বন্দরে পড়ে থাকবে, খালাস করতে পারবেন না। তাহলে অর্থনীতি চলবে কিভাবে?’

তিনি বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব আদায় একেবারে শূন্যে দাঁড়াবে। শাটডাউন চলমান থাকলে রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের কার্যক্রম চলবে কিভাবে? সার্বিকভাবে এই লাগাতার শাটডাউনের প্রভাব দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো। দেশের মানুষকে জিম্মি করে সরকারি কর্মকর্তাদের এই আন্দোলন শৃঙ্খলার পরিপন্থী। আপসহীন মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। আলোচনা ছাড়া এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ  বলেন, ‘আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থা এমন সময় এসেছে যখন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রপ্তানি একটি শক্তিশালী ধারায় যাচ্ছে। দুই বছর আমদানি সীমিত রাখার পর একটু বড় হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়া অর্থনীতির ধারাবাহিকতা ও সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর রাজস্বের ওপর ভিত্তি করেই সরকারের কার্যক্রম চলে। আন্দোলন চলমান থাকলে গণতান্ত্রিক উত্তোরণ, সুশাসন পুনঃ প্রতিষ্ঠা ও জনগণের সেবা দেওয়ার সক্ষমতা কমবে। ব্যাপারটা অনেক দূর গড়িয়েছে, অনেক জটিল হয়েছে। এখন আর দেরি না করে প্রধান উপদেষ্টা বা অর্থ উপদেষ্টার একটা নিরপেক্ষ জায়গা থেকে যেটা সবচেয়ে ভালো সমাধান আলোচনার মাধ্যমে তা করা উচিত।’

BBS cable ad

কনজুমার প্রোডাক্টস এর আরও খবর: