আলু রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ১৪২ শতাংশ

দেশে চাহিদার চেয়ে আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় রফতানিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) আলু রফতানি হয়েছে ৪৯ লাখ ১৫ হাজার ৮১৮ দশমিক ৫৫ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছিল ২০ লাখ ২৯ হাজার ৬৬১ দশমিক ৫৫ ডলার। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪২ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে গত নয় বছরে বাংলাদেশ গড়ে ৫০ হাজার টন আলু রফতানি করেছে। তবে গত অর্থবছরে সংকট থাকায় প্রায় এক লাখ টন আলু আমদানি করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। চলতি অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টনে, যেখানে চাহিদা ৯০ লাখ টন। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় ২৬ লাখ টন বা ২৮ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এছাড়া হিমাগারে জায়গার সংকট থাকায় কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে একসঙ্গে বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এতে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যেখানে উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ টাকা। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম থাকায় চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় রফতানি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। শুধু ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় ১২ হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের মোট রফতানির সমান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষের কারণেই রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এ বছর নেপাল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রায় নয় হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘দাম কম থাকায় এ বছর আলু রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত ৩২ হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে।’
রফতানিকারক তাওহীদুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে তিনি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও বাহরাইনে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ টন আলু রফতানি করেছেন। এ বছর তিনি প্রতি কেজি আলু প্রায় ১০ টাকায় কিনেছেন, যেখানে গত বছর কিনতে হয়েছিল ৩০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা গ্রানোলা, ডায়মন্ড-৭ ও ম্যাজেস্টিকের মতো উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন আলু রফতানি করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উৎপাদন বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমেছে। তবে রফতানি বৃদ্ধির ফলে কৃষকের লোকসান কিছুটা কমেছে।’ তিনি কৃষকদের গ্রানোলা, সান্তানা ও কুমারীর মতো বিভিন্ন রফতানিমুখী জাত চাষের পরামর্শ দেন এবং ভবিষ্যতে এসব জাতের চাষ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
সরজমিনে উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টনে, যেখানে চাহিদা ৯০ লাখ টন। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য আলু রফতানির মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে আলু রফতানি শুরু করে, যদিও সে সময় পরিমাণ ছিল খুব কম। ডিএইর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে গত নয় বছরে বাংলাদেশ গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টন আলু রফতানি করেছে। তবে গত অর্থবছরে রফতানি আগের বছরের তুলনায় কমে যায়।