শিরোনাম

South east bank ad

কাস্টমসের কলমবিরতি ও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

 প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

কাস্টমসের কলমবিরতি ও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

এ অচলাবস্থার রেশ না কাটতেই শুরু হচ্ছে ঈদুল আজহার দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ছুটির মধ্যে পণ্য ওঠানামার (লোডিং-আনলোডিং) কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখলেও ব্যাংক বন্ধ থাকায় শুল্ক পরিশোধ করে পণ্যের চালান খালাস নিতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে ড্যামারেজ ও কনটেইনার ভাড়া বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হবে। অন্যদিকে কারখানার জন্য নির্ধারিত সময়ে কাঁচামাল হাতে না পেয়ে উৎপাদন সীমিত কিংবা বন্ধ রাখতে হবে শিল্পোদ্যোক্তাদের।

এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ১৪ মে থেকে শুল্কায়ন, পরীক্ষাসহ সব ধরনের কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ রেখে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করেন। প্রায় একই সময় বন্দরের শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। থমকে যায় শুল্কায়ন কার্যক্রম, শুরু হচ্ছে ঈদের দীর্ঘ ছুটি—এ দুই কারণে আর্থিক ক্ষতি যা হবে সেটিকে বহুমাত্রিক বলছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়তি সময় পণ্য রাখার ক্ষেত্রে জরিমানা বাড়িয়ে দেয়াটা আরো বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর চারদিনের মধ্যে পণ্য খালাস করতে হয় আমদানিকারকদের, যাকে বলে ‘কমন ল্যান্ডিং’। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করতে না পারলে অতিরিক্ত ভাড়া (ড্যামারেজ ফি) গুনতে হয়। অর্থাৎ চারদিন শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত প্রথম সাতদিনের জন্য একটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারের বিপরীতে দৈনিক ড্যামারেজ ফি ২৪ ডলার, যা আগে ছিল ৬ ডলার।

এরপর দ্বিতীয় স্ল্যাবে অর্থাৎ পরবর্তী ১৩ দিনের জন্য প্রতিদিন ১২ ডলার করে দিতে হতো। নতুন নিয়মে সে হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৪৮ ডলারে। তৃতীয় স্ল্যাবে অর্থাৎ যতদিন বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস না করা হয় প্রতিদিনের জন্য ড্যামারেজ ফি দিতে হবে ৯৬ ডলার। আগে তা ২৪ ডলার হারে নির্ধারিত ছিল।

এ বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সম্প্রতি রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের কলমবিরতিতে শুল্কায়ন বন্ধ হয়ে পড়ার যে ধাক্কা এসেছে তার রেশ এখনো কাটেনি। দুদিন পর টানা যে ছুটি শুরু হচ্ছে তাতেও শুল্কায়ন কার্যক্রম অচল হয়ে পড়বে ব্যাংকিং ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়। ফলে পণ্য খালাসে বিলম্বজনিত আর্থিক ক্ষতি ও অতিরিক্ত চার্জের মুখে পড়তে হবে আমাদের।’

দেশের শিল্প খাতে এ অচলতা বহুমাত্রিক সংকট তৈরি করছে উল্লেখ করে আমিরুল হক আরো বলেন, ‘কাঁচামাল ও জরুরি পণ্যের চালান বন্দরে আটকে থাকবে, যার জন্য প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা দায়ী না। অথচ সেই চালান খালাস করতে না পেরে ব্যবসায়ীকে গুনতে হবে চার গুণ ড্যামারেজ। এখন তো মনে হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছি। এ গ্লোবাল ভিলেজে ব্যবসা পরিচালনায় এমনিতে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হচ্ছে আমাদের। তার মধ্যে দেশের ভেতর একের পর এক ইস্যুতে শুল্কায়ন বন্ধ বা ধীর হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা আমাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতাকে একেবারে টেনে ধরেছে।’

ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটি শুরু হচ্ছে আগামী ৫ জুন থেকে, যা শেষ হবে ১৪ জুন। এর আগে গত ঈদুল ফিতরে ৯ দিন ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। ফলে টানা ছুটি থাকলে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার ঈদের বন্ধ বড় করে দিলেও বেসরকারি খাতে আমাদের তো অফিস তিনদিন ছুটি থাকবে। ফলে কাস্টমস, ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে একটা ছন্দপতন ঘটবে। কারখানায় আসার অপেক্ষায় থাকা একটা স্পেয়ার পার্টসও যদি বন্দরে আটকে যায় তাতে দেখা যাবে এর জন্য একটা মেশিনারিজ সিস্টেম অচল হয়ে থাকবে।’ বন্দরের সঙ্গে ব্যাংকিং, কাস্টমসসহ সব অংশীদারের একটা কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন এ ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারবাহী পণ্যের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল। যেমন ফ্যাব্রিক, অ্যাকসেসরিজ, রাসায়নিক রঙ, বোতাম, জিপার ইত্যাদি। এ কাঁচামালগুলো সময়মতো না পৌঁছলে গার্মেন্টস কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং নির্ধারিত সময়ে রফতানি আদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তবে বর্তমান অচলাবস্থায় বন্দরে কাঁচামাল আটকে থাকার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তাতে তৈরি পোশাক উৎপাদন শুধু ব্যাহতই হবে না, বরং রফতানি পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের রফতানি কাঁচামাল নিয়মিত বন্দর থেকে বের করে উৎপাদনে যুক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ খুব বেশি স্টকে রাখার সুযোগ নেই। শুল্কায়নজনিত কিংবা ঈদের ছুটির প্রভাবে সময়মতো কাঁচামাল হাতে না পেলে কিংবা শুধু কোনো একটা অ্যাকসেসরিজও কারখানায় ঢুকতে দেরি হলে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা থমকে যাবে। কারণ একটা পোশাক তৈরিতে অনেক ধরনের অ্যাকসেসরিজের প্রয়োজন হয়। পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ধরে রাখতে এর সবকিছুই দ্রুত কারখানায় চলে আসতে হবে। সামনের টানা বন্ধে শুধু উৎপাদনই নয়, রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণ ঠিকঠাক সময়ে হবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে।’

চট্টগ্রামভিত্তিক অন্য বড় রফতানিকারক প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এরই মধ্যে রফতানি আদেশ কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাব দেশে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। এমন একটা সময়ে শুল্কায়ন কিংবা বন্দর থমকে যাওয়াটা বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে ফেলবে। লিড টাইম ধরাটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে ৩০-৩২ হাজার কনটেইনার থাকলে পরিচালন কার্যক্রম স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায়। তবে বন্দরের তথ্য বলছে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি শুরু হওয়ার আগে বন্দরে ৩১ হাজার কনটেইনার জমা ছিল। কিন্তু কলমবিরতিতে শুল্কায়ন কার্যক্রম গতি হারানোয় তৈরি হয় জট। এ পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হওয়াটা জরুরি ছিল, তখনই শুরু হচ্ছে ঈদের দীর্ঘ ছুটি।

এমএসসি বাংলাদেশ লিমিটেডের অপারেশন ও লজিস্টিকস বিভাগের প্রধান আজমীর হোসাইন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ৩০-৩২ হাজার একক কনটেইনার থাকলে আমরা মনে করি অপারেশন স্মুথলি চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে স্তূপ বাড়তে থাকলে কনটেইনার রাখার জায়গা সীমিত হয়ে আসে, ট্রাফিক তৈরি হয়। এভাবে একটা জাহাজের অপারেশনের প্রডাক্টিভিটির বড় ক্ষতি হয়। এখন যে বন্ধ (ঈদের ছুটি) আসছে সবকিছু মিলিয়ে আমরা যারা জাহাজসেবা দিচ্ছি, এটা একটা অশনিসংকেত হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। একটা কনটেইনার খালি হওয়ার পর থেকে এর খরচ আমাদের বহন করতে হয়। এমনও হচ্ছে ২০ দিন পার হলেও কনটেইনার আটকে পড়ে আছে। এভাবে দিন যত গড়াতে থাকে শিপিং কোম্পনিগুলোর ওপর চার্জও বাড়তে থাকে। স্টোর রেন্ট ব্যাপক বেড়ে গেছে।’

ফিডার ভেসেল অপারেটররা বলছেন, মেইন লাইন অপারেটররা (এমএলও) দেখে একটা দেশে গিয়ে জাহাজটা কত বেশি আটকে থাকছে। বেশিদিন কনটেইনার পড়ে থাকলে সে বন্দরকে তারা তত বেশি নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করে।

আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘একটা গ্লোবাল ইস্যু আছে বর্তমানে। সাম্প্রতিক সময়ে ট্যারিফ ইস্যুতে অস্থিরতা চললেও সেটি স্বাভাবিক হতে থাকায় সেখানে একটা বড় চাহিদা তৈরি হবে। চীনের রফতানির যে ডিমান্ড সেটি পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে রফতানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এ চাহিদায় চীনে অলরেডি ফ্রেইট বেড়ে গেছে, যদিও এখনো বাংলাদেশে জাহাজ ভাড়ায় এর প্রভাব পড়েনি। সাগরে পণ্য পরিবহনে সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড মেনেই ভাড়া ওঠানামা করে। সব মিলিয়ে এর আর্থিক ক্ষতি ব্যবসায়ীদের ভোগাবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা কনটেইনারগুলোর বড় একটি অংশ স্থানীয় শিল্পের কাঁচামাল। তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, সিরামিক, প্রসাধনী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্টিল ও টেক্সটাইল খাত সবকিছুতেই উৎপাদনের মূল উপাদান আসছে আমদানির মাধ্যমে। ওষুধ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফার্মাসিউটিক্যালস কাঁচামালও আটকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পণ্য সময়মতো হাতে না পেলেও লোকবল, বিদ্যুৎ ও জায়গার খরচ বহন করে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পুরোটা সময় কাস্টমস কার্যক্রম সীমিত হয়ে আগের আটকে থাকা পণ্যগুলোর খালাসও থেমে থাকবে। এতে কনটেইনার জট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এবং আমদানিকারকরা পড়বেন চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে। এরই মধ্যে বন্দরে রাখা পণ্যের ড্যামারেজ বাবদ ব্যয় চার গুণ করে বেড়েছে প্রতিটি স্ল্যাবে।’

শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল পোশাক খাত থেকেই মাসে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের আয় হয়। এটিকে ভিত্তি ধরে দিনপ্রতি আর্থিক ক্ষতির আনুমানিক একটা হিসাব দেয়া যায়। কিন্তু আনুষঙ্গিক অনেক খরচ আছে যেগুলো দৃশ্যমান না। বন্দর যদি কাজ না করে তাহলে কাঁচামাল ছাড় করা যাবে না। আবার এক্ষেত্রে শুধু পোশাক খাতের কাঁচামাল না অন্যান্য কমোডিটিও আছে, সেগুলোও আটকে যাবে। আর এসব কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ কার্গো জমে যাবে। সব মিলিয়ে প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি। ৪৩ হাজার কনটেইনার নিয়ে এরই মধ্যে জট লেগে গেছে। এসব জট ছাড়াতে অনেক দিন সময় লেগে যাবে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কর্মবিরতিতে যেখানে প্রতিদিন এক হাজার ডকুমেন্টস ক্লিয়ার করে কাস্টমস, সেখানে মাত্র ৩০০ করে প্রসেস হয়েছে। এখন যদি ওভারটাইমও করা হয়, ১০ দিনে যা ক্ষতি হয়েছে সেটাও কভার করা যাচ্ছে না, আবার প্রতিদিন এর সঙ্গে নতুন ডকুমেন্টস যোগ হচ্ছে। সব মিলিয়ে রফতানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ঘাটতিতে পড়বে। কোনো ক্রেতা বিলম্বিত চালান নিতেও চাইবে না। ফলে ক্রেতার সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেখানে একটা অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ এমনিতেই কমে গেছে। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারের আমদানি করা কমোডিটির ক্ষেত্রে ড্যামারেজ আসবে। সবকিছু মিলিয়ে খরচ বিরাট আকার ধারণ করবে।’

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ আরো বলেন, ‘আসন্ন ছুটিতে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর চালু থাকলে হবে না। কাস্টমস খোলা থাকতে হবে। আবার শুধু কাস্টমস খোলা থাকলেও কাজ হবে না। বন্ড কমিশনারের দপ্তর খোলা থাকা লাগবে। ব্যাংকও চালু রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো সরকার কীভাবে অ্যাড্রেস করবে, তার ওপর নির্ভর করবে ক্ষতি কী দাঁড়াবে। কলম বা কর্মবিরতির সঙ্গে আসন্ন ছুটি হিসাব করলে রফতানিমুখী শিল্প এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।’

এদিকে ঈদের ছুটিতে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই ফেরত আসে না। এতে উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। নিয়মিত এ ধরনের ঝামেলায় এরই মধ্যে অনেক ছোট কারখানা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। আবার ক্রেতা ধরে রাখতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গেও বেশ লড়াই করতে হচ্ছে বর্তমানে। এ অবস্থায় ঈদের দীর্ঘ ছুটি তাদের বেশ ভোগাবে বলে জানান এ খাতের উদ্যোক্তারা।

বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার জন্য কর্মবিরতি ও আসন্ন ছুটির পাশাপাশি আরো কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে। প্রডাকশন লাইনে যারা কাজ করেন, তাদের একজন থাকলে তার সঙ্গে পেছনে বা সামনের সহকর্মী না থাকলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। নিয়মিত এ ধরনের ঝামেলায় এরই মধ্যে অনেক ছোটখাটো কারখানা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। বড় কারখানাগুলো ব্যবসা নিয়ে নিচ্ছে, আর ছোট বা মাঝারিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। কর্মবিরতি বা আসন্ন ছুটি নিয়ে শিল্পের সমস্যাগুলো নীতিনির্ধারকরা অনুধাবন করতে পারছে বলে মনে করছি না। আনুমানিক হিসাবে দিনপ্রতি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম ৪০ লাখ ডলার।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ১০ দিনের কর্মবিরতি ও ঈদের আসন্ন ছুটির পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন। কারণ এ ক্ষতির দৃশ্যমান কিছু বিষয়ের পাশাপাশি অদৃশ্য অনেক উপকরণও রয়েছে। যেমন উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হলেই আমাদের অতিরিক্ত ওভারটাইম কাজ করাতে হয়। সেটা হিসাবে আসে না। মূলত এ ধরনের কর্মবিরতির প্রভাবে সরবরাহ শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) বিঘ্নিত হয়। এতে যেখানে ১০ ঘণ্টা কাজ করলেই চলত, সেখানে ১১ বা ১২ ঘণ্টা কাজ করাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী জোট ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান বাবু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রত্যাশা করছি বন্ধের মধ্যে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলমান থাকবে। বরাবরের মতো সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা এলে অতিরিক্ত কাজ করে কলমবিরতির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে বলে আশা করছি।’

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: