শিরোনাম

South east bank ad

রফতানিতে ক্ষতির বহর বাড়ছে

 প্রকাশ: ০৪ অগাস্ট ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

রফতানিতে ক্ষতির বহর বাড়ছে

বহির্বিশ্বে চামড়া শিল্পের কদর থাকলেও তা এখন পিছিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও তা এখন মলিন হয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চামড়াজাত পণ্য ও জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্র সংকুচিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে রফতানিকারক সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতা আসছেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন চামড়াজাত পণ্য ও জুতা উৎপাদন রফতানিকারক সমিতির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। সম্প্রতি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।     

সাম্প্রতিককালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিদেশি ক্রেতার আদেশ পিছিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পণ্য আটকা ও রফতানির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এই চিঠিতে। বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনেক দেশের ক্রেতা এই সময়ে দেশে আসছে না। অথচ এ সময় কোনো কোনো দেশের ক্রেতা আসার কথা ছিল। উদাহরণ টেনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি চীন থেকে ক্রেতার প্রতিনিধির আসার কথা ছিল। কিন্তু দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই সফর তারা বাতিল করেছেন। এর ফলে বিপুল পরিমাণ চামড়া রফতানি সাময়িকভাবে আটকে গেছে। এ ছাড়া জাপানের একটি ক্রেতার ক্রয়াদেশ আদেশ পিছিয়ে গেছে। আবার গত ১৯ থেকে ২২ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ইন্টারনেট না থাকার ফলে বন্ধ ছিল। এ সময়ে কোনো কোনো কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। আর বন্ধ থাকার অন্যতম কারণ ছিল চামড়ার জন্য আমদানি করা রাসায়নিক পণ্য আটকে যাওয়া।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন সফল উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেশ কিছু রফতানি পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যায়নি। এই সব পণ্যের আবার মূল্যছাড় দাবি করেছেন বিদেশি ক্রেতারা। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি চীনের এক ক্রেতার ৩ লাখ ডলারের কঠিন বর্জ্য রফতানির কেনার আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। মোটকথা, চামড়া শিল্পের অনেক ক্রয়াদেশ আদেশ হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

অপর এক উদ্যোক্তা জানান, ক্রেতা প্রতিনিধিরা এই সময়ে বাংলাদেশে আসার জন্য খুব বেশি আস্থা পাচ্ছেন না। এর ফলে এই চামড়া শিল্পের ক্রয়াদেশ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের কারণেও সময়মতো রাসায়নিক ছাড় করা যাচ্ছে না। এখন কিছুটা গতি পেলেও অনেকটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রফতানির ক্ষতি হয়েছে। যা বাংলাদেশের টাকায় ৩০৭ কোটি টাকা। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতি কেবল যে শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা নয়, কর্মসংস্থান ক্ষেত্রও প্রভাবিত করছে। এই ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

জানা গেছে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রফতানির ক্ষেত্র খুব বেশি বাড়েনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্র অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছিল ১২৩ কোটি ডলার। বিদায়ি অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে রফতানি হয়েছে ৮৯ কোটি ডলারের পণ্য।

জানা গেছে, চামড়া শিল্প রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের শিল্প আয়ে চামড়া খাতের অবদান ২ শতাংশ। মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ চামড়াজাত পণ্য। দেশের জিডিপিতে চামড়া খাতের অবদান ০.৬০ শতাংশ। আর চামড়া খাতের মূল্য সংযোজন ৮০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, চামড়া শিল্পে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। এর মধ্যে এলডব্লিউজি সনদসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স অর্জন করা, সিইটিপির রেক্টিফিকেশন ও আপগ্রেডেশন, কঠিন ও তরল বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বহির্বিশ্বে চামড়া শিল্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণে সক্ষমতা অর্জন করা। এ ছাড়া ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময় বিশ্ববাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি।
আগামী ২০২৬ সালের পর ট্যানারি মালিকদের ক্যাশ ইনসেনটিভের পরিবর্তে শুল্কমুক্ত মেশিনারিজ ও কেমিক্যালস আমদানিতে সহায়তা করতে হবে।

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: