তালিকাভুক্ত ৮টিসহ নয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আটটিসহ মোট নয়টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ অনুমোদন পাওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি ও প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের মধ্যে বণ্টনের উদ্যোগ নেবে।
তথ্যানুসারে, ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর আওতায় নয় এনবিএফআইকে অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্ডিন্যান্সে আর্থিক সংকটে থাকা এনবিএফআইগুলোর একীভূতকরণ, পুনর্গঠন কিংবা বন্ধ করার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে সেটি উল্লেখ রয়েছে। যে নয়টি এনবিএফআইকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও আভিভা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে আভিভা ফাইন্যান্স ছাড়া বাকি আটটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
সমস্যাগ্রস্ত এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোকে অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে। অনেক আমানতকারী স্কিমের মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এনবিএফআই খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশই এ নয় প্রতিষ্ঠানের। গত বছরের শেষে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকায়। নয়টির মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি গড় নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক ৯৫ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের আমানতকারী মিলিয়ে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা একক গ্রাহকের এবং ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও করপোরেট আমানতকারীর।
একক আমানতকারীর আমানত আটকে থাকার দিক থেকে শীর্ষে আছে পিপলস লিজিং, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে। এরপর আছে আভিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
অবসায়নের সিদ্ধান্তের প্রভাবে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আট এনবিএফআইয়ের শেয়ারদরে বড় পতন হয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ১০ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৯ দশমিক ৫২, বিআইএফসির ৮, এফএএস ফাইন্যান্সের ৭ দশমিক ৬৯, পিপলস লিজিংয়ের ৭ দশমিক ৪১, প্রাইম ফাইন্যান্সের ৫ দশমিক ৮৮ ও প্রিমিয়ার লিজিংয়ের শেয়ারদর ২ দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নয়টি এনবিএফআইকে অবসায়নের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এ নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মূল্যসংবেদনশীল তথ্য জানার অধিকার রয়েছে এবং এ তথ্য জানানোর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার বিষয়টিও আইনে উল্লেখ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এ অধিকার কারোর খর্ব করার সুযোগ নেই। স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হচ্ছে এবং এ ধরনের মূল্যসংবেদনশীল তথ্য যথাযথভাবে অবহিত না করার কারণে যদি বিনিয়োগকারীরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়েন তাহলে এর দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা কিংবা কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়।’


