বাবাকে নিয়ে আব্দুল হামীদ সোহাগের আবেগঘন স্টাটাস

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হামীদ সোহাগের বাবা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে ভোলা সদরের নিজ বাসভবনে ৮৩ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ভোলা আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ডা. মো. আব্দুল হাই এর কুলখানি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাদ জুম্মা ভোলা আলীয়া মাদ্রাসা মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বাবাকে নিয়ে আব্দুল হামীদ সোহাগ তার ফেসবুক প্রোফাইলে এক আবেগঘন স্টাটাস দেন। বিডিফিন্যান্সিয়ালনিউজ২৪.কম এর পাঠকের উদ্দেশ্যে আব্দুল হামীদ সোহাগের স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
বাবা, একটা ট্রমার মধ্যে আছি আমি। সেদিন নিজ হাতে তোমাকে কবরে শুইয়ে দেয়ার পর থেকেই। তোমার মাথা আমার কোলে, কতো তুলতুলে নরম দেহটা, উত্তরে মাথা পশ্চিমে মুখ দিয়ে শুইয়ে দিলাম। জীবনে প্রথম কবরে নেমেছি, তোমাকে নিয়ে। চোখ বন্ধ করলে মনে হয় এখনও তোমার মাথা আমার কোলে নিয়ে আছি বাবা।
কষ্টের মুহূর্তগুলো ভুলতে চাইলেও কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। এতো ভালোবাসো বাবা তুমি আমাকে। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ পরে আমার জন্য মুনাজাতে কপোল ভিজাতে চোখের জলে। আমার ক্যারিয়ারে উন্নতি প্রত্যাশা করতে সবসময়। কতো বিপদ থেকে আল্লাহ আমায় মুক্ত করেছেন শুধু তোমার দোয়ায়। আমার ছেলে কাব্যর জন্য কতো মায়া আর ভালোবাসা তোমার।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টা বা দশটা। তসবিহ পড়ছিলে তখন। হঠাৎ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলে তুমি। কাউকে কিছু না বলেই। কাউকে কোন কষ্ট না দিয়েই। আজীবন কতো কষ্ট করেছো সন্তানদের পড়ালেখা আর পরিবারের সুখের জন্য। কতো কথা ছিলো বলা বাকী। তুমি ফোন দিতে প্রতিদিন। নিয়ম মেনে অফিস টাইমে। কতোদিন বলেছি, অনেক কাজে ব্যস্ত আছি, রাতে কথা বলবো। কখনো বলেছি, কখনো ভুলে গেছি। অপেক্ষায় থেকে থেকে অভিমান করতে। পরদিন নিজ থেকেই অভিমান ভেঙে আবারও জানতে চাইতে কেমন আছি…। প্রতি শুক্রবার জুম্মার পরে ফোন দিয়ে কতো কথা বলতে। কিন্তু আজ ফোন আসেনি। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে বাবা। ছুটির দিনে বাবার সব স্মৃতি হাতড়ে এক অস্বাভাবিক ট্রমার মধ্যে কাটছে আমার।
বাবা, তোমার কলিজার টুকরো বড় নাতী কাব্য কবে ভালো হবে, কবে কথা বলবে সেই আশায় থাকতে তুমি। কাব্যর জন্য চিন্তার শেষ নেই তোমার। কতো দোয়া করতে… জায়নামাজে বসে খোদার কাছে চোখের জলে কতো লাখোবার বুক ভাসিয়েছো…। তোমায় যেদিন দাফন করেছি সেদিন তোমার নাতী কাব্য কান্নায় বুক ভাসিয়েছে। হয়তো বুঝতে পেরেছে তুমি আর নেই…
বাবা, তোমায় রেখে এসে আবার অফিস শুরু করেছি। জানি কেউ ফোন করবেনা অফিস টাইমে। কী এক আশায় বসে থাকি। কিন্তু বাবা তুমি নেই। তুমি থাকতে তোমার কদর বুঝতে পারিনি। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাইতো কোন কষ্ট না দিয়ে এক ডাকে নিয়ে গেছেন তাঁর কাছে। জীবনে কখনও নামাজ ক্বাযা করোনি তুমি। রোজা বাদ দাওনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। কাউকে ঠকাওনি কখনো। মৃত্যুর সময় এক টাকাও ঋণ রেখে যাওনি। হালাল উপার্জন করতে তুমি। চারিদিকে ঘুষ দুর্নীতি যখন গ্রাস করছে তখন বয়স ফুরোবার আগেই আর্লি রিটায়ারমেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি। ওপারে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখবেন। সেই দোয়া করি। তোমার আদর্শে আমরা যাতে বাকী জীবন কাটাতে পারি সেই দোয়াও করো তুমি…
(মার্কেন্টাইল ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হামীদ সোহাগের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেয়া)