বৈরি সময়েও ব্যতিক্রমী যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখা : ৫৩ কোটি টাকার মুনাফা
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ পাঁচ মাসে নতুন করে খুব বেশি ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আবার পুরাতন ঋণ আদায়ও হয়নি। আমদানি রফতানি বাণিজ্য কম হওয়ার কারণে কমে গেছে কমিশন। অন্যদিকে ঝুঁকিভাতাসহ সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়েছে। তবে এ বৈরি সময়েও ব্যতিক্রমী যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা।
যমুনা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখায় চলতি বছরের জুন মাস শেষে আমানত ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। যা ২০১৪ সালের তুলনায় ২৪৬ শতাংশ বেশি। এ শাখা থেকে বিতরণ হওয়া ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। যা ২০১৪ সালের তুলনায় ৮৪৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এ শাখার মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। আমদানি বাণিজ্য বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। গত ছয় মাসে গ্যারান্টি ব্যবসা হয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। যা ২০১৪ সালে ছিল মাত্র ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। শাখাটির নানামুখি ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত কয়েক বছরের মুনাফা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৬ সালে যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখায় মুনাফার পরিমান ছিলো ৪৪ কোটি ৭ লাখ, ২০১৭ সালে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ১৯ লাখ এবং ২০১৯ সালে ২১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকেরে মহাখালী শাখার মাধ্যমে ৫২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মুনাফা অর্জিত হয়েছে। এ ছয় মাসের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সারা দেশব্যাপি ১৪২টি শাখার মাধ্যমে যমুনা ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যমুনা ব্যাংক গত ছয় মাসে ২৮০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।
এ বিষয়ে যমুনা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের কার্যক্রমকে বহুমুখি করার চেষ্টা করেছি। মোট মুনাফার মহাখালী শাখার মাধ্যমে এক পঞ্চমাংশ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষস হয়েছি। বর্তমান গ্রাহকদের সর্বোচ্চ পরিমানে সেবা প্রদানের পাশাপাশি নতুন গ্রাহক অকর্ষনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সামনের দিনে উন্নতির ধারা অব্যহত রাখতে পারবো। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মহাখালী শাখার ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেবার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এ শাখা মুনাফার ক্ষেত্রে উন্নতি করছে।
উল্লেখ্য, মো. আব্দুস সালাম যমুনা ব্যাংকের ডিএমডি হওয়ার পরও এ শাখার সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য হেড অফিসে না বসে এ শাখাতেই বসেন। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত (নিট) মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় সব ঋণেরই সুদহার কমে গিয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ও আমানত ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সুদহার কমে যাওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদহার কমে গিয়েছে। এরপর আবার করোনার অভিঘাতে কমেছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা।
এ সময়ে অনেক ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা কমে গেছে। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাস শেষে অনেক ব্যাংকের সব শাখা মিলে ৫৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। তবে বেশ কিছু ব্যাংকের শাখা বেশ ভাল করেছে। এর মধ্যে শাখাভিত্তিক পরিচালন মুনাফার হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখা ৪৬ কোটি এবং মহাখালী শাখা ৩৩ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। বেশির ভাগ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক হিসাব ও প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে।