অধিকাংশ ব্যাংক বেতন কমাবে না
বেতন কমিয়ে কর্মকর্তাদের মনোবল ভাঙতে চায় না অধিকাংশ ব্যাংক। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে বাহুল্য খরচ কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে। বিশেষ করে বাড়ি ভাড়া, কর্মকর্তাদের গাড়ি ও বিনোদন খরচ, স্টেশনারি, দৈনন্দিন আপ্যায়ন খরচ, পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের খরচসহ অন্যান্য খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছে কোনো কোনো ব্যাংক। ব্যাংক শাখার ভাড়া কমাতে এরই মধ্যে বাড়ি মালিকদের চিঠি দিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক।
ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল থেকে সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো এমনিতেই চাপে আছে। এর মধ্যে আবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে নতুন ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এ সময়ে ঋণ আদায়, বৈদেশিক বাণিজ্য কমে যাওয়াসহ নানা কারণে অন্য সব খাতের মতো ব্যাংকগুলোর আয়ে প্রভাব পড়বে। আবার সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়নের জন্য নানা চাপ নিতে হচ্ছে। তবে বেতন কমানো এই সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়। কেননা বেতন কমালে পুরো অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, বেতন কমানো কোনো সমাধান নয়। বরং অন্যান্য খরচ কমানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া কমানোর বড় একটা জায়গা আছে। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ভাড়া কমানোর জন্য সব মালিককে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার বেতনের বাইরে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে যিনি ৬৫ হাজার টাকা পান সেখান থেকে ১৫ হাজার টাকা কমানো হবে। এ ছাড়া শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকদের চা-নাস্তার জন্য আপাতত খরচ বন্ধ রাখা হয়েছে। এভাবে টিকে থাকার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, বেসরকারি খাতের এক্সিম, সিটি ও এবি ব্যাংক এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের বেতন কমানোর জন্য চেয়ারম্যান ও এমডিদের চিঠি দিয়েছে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। যদিও বিএবির এই চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ব্যাংকাররা মনে করেন, ব্যাংকের পরিচালকদের আয়ের অনেক খাতের একটি হলো ব্যাংক। ৬ বছর বা এক মাস যদি এখান থেকে আয় নাও পান তারপরও তারা শেষ হয়ে যাবেন না। তবে ব্যাংকারদের একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হলে তারা বড় ধরনের চাপে পড়ে যাবেন।
জানতে চাইলে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, বেতন-ভাতা কমানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে জীবন বাজি রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন। যে কারণে তাদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, র্যাব, পুলিশের মতোই ব্যাংকাররা সম্মুখ যোদ্ধা। এ রকম সময়ে তারা ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে কাউকে ছাঁটাই বা বেতন কমানোর প্রশ্ন আসবে না।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের সহকর্মীরা জীবন বাজি রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে বেতন কমানোর কোনো কারণ নেই। বরং অন্যান্য খরচ কমানো যেতে পারে।'
এনসিসি ব্যাংকের এমডি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমাতে হবে। বেতন না কমিয়ে বিকল্প খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। প্রত্যেক বাড়ির মালিককে ভাড়া কমানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী তিন বছর ভাড়া না বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে সব কেনাকাটা কেন্দ্রীয়ভাবে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি কত দীর্ঘ হবে কেউ জানে না। যদি দেখা যায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে তখন এক রকম অবস্থান থাকবে। যদি আরও দীর্ঘায়িত হয় তখন ভিন্ন কৌশল নিতে হবে। তাদের ব্যাংক প্রথমে পরিচালন ব্যয়ের অন্যান্য খাতে হাত দেওয়ার পক্ষে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জায়গা ভাড়া, পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক, ব্যবস্থাপক সম্মেলন, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, পুলের গাড়ি ব্যবহারসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর বাহুল্য খরচ হয়। এসব কমানো গেলে ব্যাংকের ব্যয় অনেক কমে যাবে। এসব না কমিয়ে বেতন কমানো অযৌক্তিক।