আধুনিক শিবচর গড়ার কারিগর নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি

নূর-ই-আলম চৌধুরী টানা ৬ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ। তিনি পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি। নূর-ই-আলম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর বড় ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর বড় ছেলে । সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। পদ্মা আড়িয়ালখা নদসহ অসংখ্য খাল বিল জলাশয়সমৃদ্ধ এক সময়ের প্রত্যন্ত শিবচর উপজেলাকে মুক্তিযুদ্ধময় আবহে পরিকল্পিত উন্নয়নে দেশ সেরা আধুনিক উপজেলা গড়ার কারিগর এই নেতা। শিবচর উন্নয়নের মডেল মানছেন দেশের শীর্ষ নেতৃত্বও।
নূর-ই-আলম চৌধুরী ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ও সংস্কৃত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্র স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্র স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পকিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এ সংসদে জাতীয় সংসদের হুইপ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সচিব, সংসদ কমিটি, সংসদীয় সভাপতি এবং বেসরকারী সদস্যদের বিল ও বেসরকারী সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপের দায়িত্ব পান।
চীফ হুইপের পিতা মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী(দাদাভাই) ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। দাদাভাই ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক ও মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ। ১৯৭৩ সালে তিনি আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। ঢাকা-মাওয়া-শিবচর-খুলনা মহাসড়কটিও ছিল সংসদে তার প্রস্তাবিত। নারী শিক্ষার উন্নয়নে তার ভূমিকা আজো সমাদৃত। এরপর ১৯৯১ সালে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে উপ নির্বাচনে তার বড় ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় নেতা কর্মী ও এলাকার মানুষের সাথে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। যার প্রভাব দেখা যায় প্রতিটি নির্বাচনী ফলাফলেই। এরফলে পদ্মা আড়িয়াল খা নদসহ অসংখ্য নদ নদী খাল বিল সমৃদ্ধ শিবচর উপজেলা আজ দেশ সেরাদের কাতারে। ষষ্ঠবারের মতো একক প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেন উপজেলা আওয়ামীলীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন। ১৯৯১ সালের প্রথম উপ নির্বাচনের পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই ব্যবধান আরো বেড়ে ভোটের ব্যবধান দাড়ায় অর্ধ লাখেরও বেশি। বিরোধী দলে থেকেও তার কর্মতৎপরতা বিশেষ করে দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতি বিশেষ টানের কারনে তিনি হয়ে উঠেন অপ্রতিদ্বন্দী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি জয়ী হন লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে। আর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় ২ লক্ষাধিক।
এক সময় আমাদের শিবচর ছিল একটি চরম অবহেলিত জনপদের নাম; সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি এলাকা। সেই শিবচর এখন নুর-ই-আলম চৌধুরীর ছোয়ায় মডেল উপজেলা পরিণত হয়েছে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনিই মাদারীপুরকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গেছেন। এই আধুনিক শিবচরের তিনিই একমাত্র স্থপতি।
প্রথম থেকেই তরুণ বয়সী এই নেতা এলাকার উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগী। পদ্মা আড়িয়াল খার মতো নদ নদী ছাড়াও অসংখ্য নদী খাল বিলে ঘেরা উপজেলাটিতে নির্মাণ করেছেন ২ শতাধিক ব্রীজ কালভার্ট, হাজার কিলোমিটার আভ্যন্তরীন সড়ক, ২শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ভবন, দেশের প্রথম হাউজিং প্রকল্প , ৪টি কলেজকে অনার্স ও ১টি কলেজে মাস্টার্সে উন্নতিকরন, ৪টি থানা – তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক ৩টি অডিটোরিয়াম, মুক্তমঞ্চ, শিল্পকলা একাডেমি, সুপার মার্কেট, বাস স্ট্যান্ড, শিশু পার্ক নির্মান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন। বিশেষ করে ১১টি ভাস্কর্য মুর্যাল নির্মানসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে নানান উদ্যোগ উপজেলাটি সারাদেশের নেতৃবৃন্দর নজর কেড়েছে। জাতীয় সংসদেও শিবচরের উন্নয়ন নিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। অনেক মন্ত্রী এমপি শিবচরকে মডেল মেনে পরিদর্শনে আসেন এ উপজেলায়। বিশেষ করে পদ্মা সেতুকে ঘিরে ঢাকার নিকটবর্ত্তী এ উপজেলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কয়েকটি মেগা প্রকল্প এ এলাকায় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আগামী প্রজম্মের উজ্জ্বল এক ভবিষ্যতের। এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ইনষ্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে দত্তপড়ায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজে। প্রধানমন্ত্রী ১০৮ একর জায়গায় ১৯ শ কোটি টাকা ব্যয়ে তাঁত পল্লী ও ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্পর ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন এখানে। হাতে নেয়া হয়েছে ভারতের আইআইটির আদলে আইসিটি ইনষ্টিটিউট ও হাইটেক পার্ক প্রকল্প, কারিগরি ইনষ্টিটিউট। স্বাস্থ্য খাতে ইনষ্টিটিউট অব হেলথ এন্ড টেকনোলজি, নার্সিং ইনষ্টিটিউট, ৩টি মা ও শিশু কেন্দ্রসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১শ শয্যায় উন্নিতকরনসহ নানান প্রকল্প।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নুর-ই-আলম চৌধুরী পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।