২ হাজার কোটি টাকার চাল আমদানির প্রভাব নেই বাজারে

২ হাজার কোটি টাকার চাল আমদানির প্রভাব নেই বাজারে২ হাজার কোটি টাকার চাল আমদানির প্রভাব নেই বাজারে
চালের বাজার সহনীয় রাখতে আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। পাশাপাশি শূন্য মার্জিনে চাল আমদানিরও সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এর ফলে গত দুই মাসেই চাল আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি)খোলা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণপত্রের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল দেশেও এসেছে। বাকি চাল আমদানির পর্যায়ে থাকলেও এর প্রভাব নেই বাজারে। দুই সপ্তাহ আগের দামেইবিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
হাওড় অঞ্চলে বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে ধান উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর চালের দাম রেকর্ড বেড়ে যায়। এক মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৪৬-৪৮ টাকায়। চিকন চালের দাম ওঠে প্রতিকেজি ৫৫-৬০ টাকায়। আমদানি শুল্ক হ্রাস ও শূন্য মার্জিনে চাল আমদানির ঘোষণার পর এক সপ্তাহের মধ্যে পণ্যটির দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত কমে। যদিও ওই সময় আমদানি ছিল সীমিত। এরপরব্যাপক পরিসরে চাল আমদানি হলেও এর প্রভাব পড়ছে না দামে। দুই সপ্তাহ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে এখনো। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের হিসাবে, গতকালও প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে৪২-৪৬ ও চিকন চাল ৫৪-৫৮ টাকায়।
আমদানি ব্যয় বেশি পড়ায় স্থানীয় বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। যশোরের নওয়াপাড়ার চাল আমদানিকারক আবদুল ওহাব বলেন, সরকারের সুযোগ-সুবিধার কারণেভারত থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিই। দেশটিতে চালের দাম বেশি থাকার পরও ঝুঁকি নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার টন চাল আমদানি করি। প্রতি কেজি চাল আমদানিতে এখন ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ টাকা। এরসঙ্গে ব্যাংক সুদ, বন্দর খরচসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ করলে দাম আরো বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫-৭৫ কোটি টাকার চাল আমদানি হতো দেশে। এরপর বাড়তে থাকে আমদানির পরিমাণ। জুনেই চাল আমদানিরএলসি খোলা হয় ১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার। ২২ জুলাই পর্যন্ত খোলা হয় ৮১৪ কোটি টাকার এলসি। তবে মাস শেষে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানান ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা। এলসি নিষ্পত্তির পরদুই মাসে দেশে প্রবেশ করেছে প্রায় দেড় লাখ টন চাল।
চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবেআমদানির মাধ্যমে সরকারের খাদ্য মজুদ শক্তিশালী করতে সচেষ্ট রয়েছে সোনালী ব্যাংক। তবে কেউ যাতে সুযোগের অপব্যবহার না করে, সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছি আমরা।
এদিকে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও বাকিতে আমদানির সুযোগ দেয়ায় নতুন করে অনেকে চাল ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপেরসভাপতি হারুনুর রশিদ হারুন বলেন, সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোয় ও শূন্য মার্জিনে এলসি খোলার সুযোগ দেয়ায় হিলি স্থলবন্দরে চালের ব্যবসায় নেমেছেন অনেক আমদানিকারক। আগে বন্দরদিয়ে ১০ জনের মতো ব্যবসায়ী চাল আমদানি করতেন। এখন আমদানি করছেন ৩০ জনের মতো।
আমদানিকারকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বন্দরটি দিয়ে বেড়েছে চাল আমদানির পরিমাণও। জুনের আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাঝেমধ্যে দু-চার ট্রাক চাল এলেও এখন আসছে ৫০-৬০ ট্রাক। এর পরও হিলিস্থলবন্দরেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
চালের বাজার সামাল দিতে গত ১৯ জুন শূন্য মার্জিনে পণ্যটি আমদানির বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বলা হয়, ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকলেও চাল আমদানির ঋণপত্র খোলাযাবে। ওই নির্দেশনায় চাল আমদানিতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর গত ২১ জুলাই নতুন সার্কুলার জারি করে চাল আমদানির শর্ত আরোশিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশী ক্রেতা বা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা বাকিতে চাল আমদানি করা যাবে।
খাদ্যপণ্য হিসেবে চাল আমদানি সহজ করতেই এ উদ্যোগ বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, বাকিতে আমদানিকৃত চালের ঋণের টাকা পরিশোধেরবিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। ব্যাংকগুলোকে তা মেনে চলতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যাংকগুলো যাতে চাল আমদানির এলসি খোলে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।বিধিবিধান মেনে চাল আমদানি হলে ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকিতে পড়বে না।
মূলত সার, মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) ও শিল্পের কাঁচামাল বাকিতে আমদানির সুযোগ রয়েছে। এ আমদানির বিপরীতে ওই দেশের বিক্রেতার কাছ থেকে বাকিতে বা ওই দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ(বায়ার্স ক্রেডিট) নেয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় বলে জানান অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাপরিচালক আনিস এ খান। তিনি বলেন, আপৎকালীন দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে কেউ চালের ব্যবসায় নামলে লোকসান হবেই। ব্যাংকগুলোর উচিত হবে চালের এলসি খোলার আগে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই করা। অন্যথায় ব্যাংকঋণ ঝুঁকিতে পড়ার পাশাপাশি চালের বাজারেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এর আগেও চাল ব্যবসায়ী নন, এমন ব্যবসায়ীরা আপৎকালীন চাল আমদানির লাইসেন্সপেয়েছিলেন।