South east bank ad

কারখানায় ২০ শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়ন হলে পোশাক শিল্প অস্থিতিশীল হবে

 প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   গার্মেন্টস/টেক্সটাইল

কারখানায় ২০ শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়ন হলে পোশাক শিল্প অস্থিতিশীল হবে

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পাওয়া ‘বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এ বলা হয়েছে ন্যূনতম ২০ জন শ্রমিকের সমর্থন পেলেই গঠন করা যাবে ইউনিয়ন। যদিও এ বিধান নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এ নীতির কারণে পোশাক শিল্প অস্থিতিশীল হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে সংশোধিত শ্রম আইন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানান বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। এ সময় তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তৈরি পোশাক শিল্পের সমস্যা তুলে ধরতে চার মাস ধরে সময় চেয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। কারো সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হলে তার সঙ্গে বসতে হয়। তিনি যদি সময় না দেন তাহলে কীভাবে নেগোসিয়েশন করব? আমরা বারবার সময় চেয়েও সময় পাইনি।‌’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েও পাই না, অথচ স্টারলিংকের কোম্পানি স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলে তার সঙ্গে উনি দেখা করেন। সেই কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। অথচ তিনি ৪০ বিলিয়ন ডলারের খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন না।’

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে, যা ভারসাম্যহীন ও অযৌক্তিক বলেও দাবি করেন মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ধাপে ধাপে শ্রমিকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। যেখানে প্রথম ধাপে ৫০-৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০-৩০০ শ্রমিক ও পাঁচটি নির্ধারণ করা হয়েছে।’

শ্রমিকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা চাই না, শ্রমিকের নামে বাইরের কেউ, কোনো বাড়িওয়ালা, মেস ব্যবসায়ী, ঝুট ব্যবসায়ী বা অন্য কেউ সহজেই শ্রমিক সংগঠন করে ফেলতে পারে।’

মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘পোশাক খাতে ঝুট ব্যবসা এখন একটা বিষফোঁড়া। আমরা চাই না, বাইরের কেউ এসে শ্রমিক সংগঠন করার সুযোগ নিয়ে এ শিল্পকে অস্থিতিশীল করুক।’

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার বিপরীতে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের রফতানিমুখী শিল্প খাতে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে আসবে বলে দাবি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ৪০ বছর পর মাশুল বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা বলছেন, এ সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার দর বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃত অর্থে মাশুল এরই মধ্যে প্রায় ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ডলারে মাশুল আদায় করে থাকে উল্লেখ করে তিনি জানান, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে যেখানে প্রতি ডলার ছিল ২৯ দশমিক ৮৯ টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১২২ টাকার বেশি।

বিজিএমইএর দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনো লোকসান করেনি, বরং প্রতি বছরই মুনাফা করছে। তাই সেবার মান উন্নয়ন না করে কেবল মাশুল বাড়ানো অযৌক্তিক। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বের ৪০৩টি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৩৫৭তম, যা এর অদক্ষতা নির্দেশ করে। এ পরিস্থিতিতে ব্যয় বাড়ানো নয়, বরং দক্ষতা বৃদ্ধি করা জরুরি বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ), নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বাপি) সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু), সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম ও সহসভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমানসহ অনেকে।

BBS cable ad

গার্মেন্টস/টেক্সটাইল এর আরও খবর: