সর্বাত্মক লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন

মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। সমগ্র জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ১৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো দিন-রাত মাঠে থেকে সর্বাত্মক লকডাউন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আল-আমিন এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দায়ে ৬ ব্যাক্তিকে ৯হাজার ২শ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু কীটনাশক ও ওষুধের দোকান ছাড়া যাবতীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কিছু ব্যবসায়ী সেটি মানছে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং সহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া জনসাধারনের মাঝে মাস্ক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা এবারও কঠোরভাবে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। গত বছর করোনাভাইরাস শুরুর সময় সরকার ঘোষিত লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নিজ হাতে সনাতন ধর্মের মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করা সহ সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করায় আলোচিত হন মো. মাসুম রেজা।
সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজার-সড়কে অভিযান পরিচালনা করছেন তিনি। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অমান্যকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করছেন, সাথে সচেতনও করছেন। যেখানেই মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব মানা হয় না, সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাচ্ছেন। সেই সঙ্গে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা বলেন, সরকার দেশ ও মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবে সাত দিনের কঠোর নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। মাঠপর্যায়ে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করছি।
এদিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় আলফাডাঙ্গায় ৮ ব্যাক্তিকে ৩২ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা নিশ্চিত করতে পৌরসদর বাজার, গোপালপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় নির্দেশনা উপেক্ষা করে দোকান খোলা রাখার অপরাধে ৮ প্রতিষ্ঠান মালিককে ৩২ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, লকডাউন চলাকালীন সকলকে সরকারের দেওয়া বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলার আহবান করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে জেলার মধুখালীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা মনোয়ার। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখায় প্রতিষ্ঠান মালিককে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় মুখে মাস্ক না থাকার অপরাধে কয়েকজন পথচারীকেও জরিমানা করা হয়।
এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যালয় খোলা রেখে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করায় শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের দুই পরিচালক কে জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মুহাম্মদ আল-আমিন পরিচালকদ্বয়কে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন।
অপরদিকে জেলার সদরপুরের বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল চন্দ্র শীল। এসময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন দোকান খুলে রাখায় প্রতিষ্ঠান মালিককে জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
এদিকে জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। হটলাইন নম্বর-(০১৭০১-৬৭০০০৮) এবং (০৬৩১-৬৫০৬২)।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, আমাদের প্রত্যেককেই নিজ থেকে সচেতন হতে হবে। তবেই এই মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রশাসনের সকলেই তৎপর রয়েছে। জেলার নয় উপজেলাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ১৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিদিনই মানুষকে ঘরে রাখতে এবং সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।