শত বাধার পরও বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করেছে নগদ: তানভীর এ মিশুক

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
‘প্রান্তিক মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে ডিজিটাল সেবার বিকল্প নেই। সে কারণে প্রথম থেকেই প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের জন্য সেবার কলেবর বৃদ্ধি করতে কাজ করছে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ। এক্ষেত্রে সাফল্যও এসেছে। এখন লক্ষ্য আরও বড় এবং বিস্তৃত। নগদ এখন আরও বড় কলেবরে কাজ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেখানে গ্রাহকের প্রয়োজনীয় যে কোনো আর্থিক সেবা দেবে নগদ।’
মোবাইলে আর্থিক সেবা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানান, প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক। সেবাটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর হলেও বাজারে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে এগিয়ে চলছে তারা। এই অল্প সময়েই সাড়ে ৬ কোটি গ্রাহক পেয়েছে। প্রতিযোগিতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, বাধ্য হয়ে অন্যদেরও গ্রাহক পর্যায়ে সেবার খরচ কমাতে হয়েছে। আর এখানেই নিজেদের পরিশ্রমে সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা দেখছেন তরুণ উদ্যোক্তা তানভীর। নগদের অব্যাহত প্রচেষ্টা কারণেই এখন প্রান্তের হতদরিদ্র মানুষটিও মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে সরকারি সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে নিমিশেই।
সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধন হয় নগদের। সে সময়ই গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দেশে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি চালু করে সাড়া ফেলে দেয় নগদ। অনেক সমালোচনা আমরা পেয়েছি। কিন্তু যখন সবাই দেখেছে উপকার পাওয়া যাচ্ছে তখন সেটি সবাই গ্রহণ করেছে; এখানেই আমাদের ভালোলাগা যে, উদ্ভাবনটি দেশের কাজে লাগছে, বলছিলেন তানভীর। তার বিবেচনায়, প্রচলিত অচলায়তন ভেঙে নতুন কিছু করতে গেলেই সমালোচনা হবে, বাধা আসবে এটাই স্বাভাবিক। প্রভাব ও কার্যকারিতার বিবেচনায় নগদের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন হলো, যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি। এর ফলে যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্যও মোবাইল আর্থিক সেবার অ্যাকাউন্ট খোলাটা সহজ হয়ে যায়। আর এই শক্তির ওপর ভর করেই সরকার এখন সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণসহ সরকারের অসংখ্য ভাতা বিতরণে নগদকে বেছে নিয়েছে।
*১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার এই পদ্ধতি বিশ্বে অনন্য এবং নজিরবিহীন, যা দেশকে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সম্মাননা এনে দিয়েছে বলেও জানান তানভীর। এই উদ্ভাবন প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত দুই বছরে সরকার নগদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা ও সহায়তা বাবদ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এতে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি মানুষ সুবিধা পেয়েছে।
নগদের মালিকানা এবং ঋণবিষয়ক সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্পর্কে তানভীর এ মিশুক বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোনো ঋণ নেই। আমরা যে পরিমাণ ইলেকট্রনিক মানি জেনারেট করেছি তার তুলনায় অনেক বেশি ফিজিক্যাল মানি বিভিন্ন ব্যাংকে আমাদের জমা করা আছে। উদ্ভাবন বা প্রতিযোগিতা করে নয়, বরং অন্ধকার পথে নগদকে ঘায়েল করতেই এই খেলা সাজানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবরকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, অনেক দিন থেকে তারা নানা রকম অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন। কখনো মালিকানা নিয়ে, কখনো লাইসেন্সিং নিয়ে আবার কখনো অন্য কোনো অপপ্রচার আমাদের বিরুদ্ধে চলছেই। তারপরেও গ্রাহকদের ভালোবাসা পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
একই সঙ্গে অল্প সময়ে নগদের আকশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়েই স্বার্থান্বেষী একটি চক্র এমন চক্রান্ত করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করেন তিনি। আমাদের উদ্ভাবন এবং গ্রাহকসেবার কারণে বাজারে রীতিমতো নাড়া পড়ে গেছে। আর সে কারণে অনেকেই ব্যবসা হারিয়েছেন। মূলত তাদের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে নগদকে, বলেন এই তরুণ ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য হিসেবে জানান, সমস্ত চক্রান্তের পরেও নগদকে বাংলাদেশের জাতীয় ওয়ালেট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাজারে আসার পর বহুদিন ধরে হাজারে ২০ টাকার ক্যাশ-আউট চার্জ অর্ধেকে নামিয়ে আনে নগদ। তাদের চালু করা সব ধরনের বিল পেমেন্ট ফ্রি, মোবাইল রিচার্জে অবাক করা সব অফার এখন আরও অনেকেই গ্রহণ করেছে। নগদের সেবা নিয়ে গত তিন বছরে গ্রাহকের দেড় হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে বলেও দেশের দ্বিতীয় গ্রাহক সেরা মোবাইল আর্থিক সেবাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এভাবেই শত বাধার মধ্যে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হয়েছে। শুধু নগদ-ই নয়, এর আগে দেশে আরও অনেকগুলো জনপ্রিয় ডিজিটাল সেবার ব্যবসা শুরু করে তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন তানভীর।