ছাত্রলীগ সেক্রেটারির হুমকি-ধমকির মূখে দোলন চাপা হল প্রভোস্টসহ ৫ জনের পদত্যাগ, তীব্র উত্তেজনা

মোঃ নজরুল ইসলাম, (ময়মনসিংহ) :

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিবের কথামত বিজয় দিবসের বিশেষ খাবারের আয়োজনে সমস্ত টাকা তার তুলে না দেয়ায় নানা হুমকী-ধমকি ও চরম অপমান করায় দোলনচাপা মহিলা হলের প্রভোস্টসহ ৫জন বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এতে শিক্ষক, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিজয় দিবসের ৫০তম সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে দোলনচাপা মহিলা হল কর্তৃপক্ষ। খাবারের জন্য পোলাও এর চাল ও খাসি ক্রয় করা হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিব উত্তেজিত হয়ে সমুদয় টাকা তার হাতে তুলে দেয়ার জন্য নানা রকম হুমকী-ধমকি দেয় বলে জানান দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা।

পদত্যাগপত্র জমাদানকারীগণ হলেন দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা, চারজন হাউজ টিউটর হলেন- আরিফ আহমেদ, আফরুজা ইসলাম লিপি, রাশেদুর রহমান ও ফারজানা খানম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর পদত্যাগপত্র জমার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, চাঁদা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসাথে করতে চেয়েছিলাম। আর এই আলাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রোক্টর স্যারের সামনেই হয়েছে। বরং দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছে। এতে হলের ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।

দোলনচাপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা এই প্রতিবেদককে জানান, একজন শিক্ষক ও প্রভোস্টের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা ভুলে দিয়ে আমাকে হুমকী দিয়ে আমাকে ছাত্রদের হলে যেতে বললে আমি সেখানে যাইনি। তিনি বলে আমি তোমাদের সাথে দেখা করব তবে ছেলেদের হলের বাইরে।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা, বলেন আমি ও দুইজন হাউজ টিউট এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রোক্টর স্যার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলতে যাওয়ার সময় অন্য একজন ছাত্র এতে উত্তেজিত হয়ে আমাদের নানা হুমকী দিতে থাকে।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা জানান, ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রোক্টর ড. উজ্জল কুমার প্রধান আমাদের কাছে আসলে আমরা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলি। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব দোলন চাপা হলের খাবারের জন্য পুরো টাকা তার হাতে তুলে দিতে বলে। প্রভোস্ট বলেন, আমরা খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী ছাত্রী যোগার করি। আমরা খাসি ও পোলাও চালসহ সব কিছু কিনে ফেলেছি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেয়া হয়েছে। বিজয় দিবসের ৫০তম সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের সারপ্রাইজ দিয়ে উপহার দেয়ার জন্য ঢাকা থেকে নানা উপহার সামগ্রীও কেনা হয়েছে।

এতে ছাত্রলীগ নেতারা আরো বেশী উত্তেজিত হয়ে বলে খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে হবে। তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) বলেন, ছেলেদের হলের সাথে একসাথে আয়োজন করবে। শুধু ছাত্রলীগ সংগঠন যারা করে তারা সবাই মাঠে বসে একসাথে খাবে। আর যারা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং যারা ছাত্রলীগ না করে তাদের খাসি খাওয়ার অধিকার নেই!

ছাত্রলীগ নেতারা আরো তাদের জানায়, দোলন চাপা হলে যত সীট আছে সব পলিটিক্যাল সীট হবে। যারা ছাত্রলীগ করবে না তারা হলের সীটে থাকতে পারবে না এবং থাকতে দেয়া হবে না।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা বলেন, আমরা যতটা সহনশীলভাবে বলা দরকার ঠিকততটা সহনশীলভাবে বলেছি কিন্ত তারা (ছাত্রলীগ) নেতারা নানা হুমকী-ধমকি দিতে থাকে।

ছাত্রলীগ নেতারা আরো তাদের জানায়, ছাত্রলীগ সেক্রেটারির কথামত না চললে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ-পাতা, পানি সব নড়ে রকিবের ইশারায়। ১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সব সিস্টেম তৈরি করছি আমি (রকিব)। আমি যাকে প্রভোস্ট চাইব সেই প্রভোস্ট হবে। আপনাকে (সিরাজুম মুনিরা) আমি (রকিব) আর মেনে নিতে পারছি না।

এঘটনার সময় ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রোক্টর স্যার ঠাঁই দাড়িয়ে রইলেন। তারা ছাত্রলীগ নেতাদের সামনে কিছুই বললেন না। নিরুপায় হয়ে আমরাও তাদের হুমকী-ধমকী খেয়ে চলে গেলাম। এ ঘটনাটি ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে ক্যাম্পাসে ঘটেছে। এ নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। আমি প্রভোস্টসহ ৪জন হাউজ টিউটর একসাথে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা এই অরাজক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে পারবো না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম। ১৫ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে ৫টায় হল প্রশাসন থেকে পদত্যাক করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছি।