শিরোনাম

South east bank ad

‘আমি প্রথম শ্রেণির অফিসার হতে চাই’ বললেন প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া

 প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

শেখ সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :

শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতির পাড় গ্রামের মাওলানা মো: ছফির উদ্দিন ও মুর্শিদা ছফিরের প্রতিবন্ধী কন্যা ছুরাইয়া (১৮)। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া ছোট থেকেই লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় হাত দিয়ে কোন কাজ করা বা লেখার শক্তি নেই তার হাতে। তাই সে তার দুই পা দিয়েই লেখার চেষ্টা করতে থাকে। বাক প্রতিবন্ধী থাকলেও শিক্ষকদের কথা শুনেই সে পড়া শিখতো।

প্রথমে সে তার গ্রামের বাড়ী আন্ধারিয়া সুতির পাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া শুরু করে। কারোর সাহায্য ছাড়াই দুই পায়ে লিখেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এর পর সে আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সলে জেএসসিতে জিপিএ-৪ ও ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আর ২০২০ সালে শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এলাকাবাসী প্রথমে তাকে অবহেলা করলেও ছুরাইয়ার এ অধম্য চেষ্টায় এখন তাকে উদাহরণ মনে করে সবাই। এলাকাবাসীর দাবী সরকার যেন এ মেয়েটির দিকে দৃষ্টি দেন।

প্রতিবন্ধী ছুরাইয়ার স্বপ্ন, সে ভবিষ্যতে প্রথম শ্রেণীর অফিসার হবে। স্বপ পুরনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ”খ” ইউনিটে অংশ নিয়েছে এবছর। দু পায়ে লিখে পরীক্ষা দেয়ায় সবার নজরেও এসছে সে। শুধু তাই নয় দুই পায়ে মোবাইল ব্যবহারসহ সব ধরনের কাজ করে থাকে ছুরাইয়া।

প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছুরাইয়াকে প্রথমে বুঝা মনে করতো তার বাবা-মা। কিন্তু ছুুরাইয়ার অধম্য চেষ্টা আর ইচ্ছা শক্তির ফলে এখন সে মেধাবী শিক্ষার্থী। তাই তার বাবা মাও এখন আর তাকে বুঝা মনে করেননা। তাকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন সরকারের সাহায্য পেলে একদিন সে অনেক বড় হবে।
দুই হাতেই শক্তি না থাকায় তার মা গোসল, খাওয়ানোসহ অন্যান্য কাজ করে আসছেন। ছুরাইয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার মা মুর্শিদা ছফির।

জেলা প্রশাসনের প্রত্যাশা ছুরাইয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিতে পারবে। ছুরাইয়ার লেখা পড়ার জন্য জেলা প্রশাসন সম্ভব সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মরিয়ম আক্তার বলেন, আমরা প্রথমে ছুরাইয়াকে অবহেলা করতাম। মনে করতাম মেয়েটিকে নিয়ে বাবা মার অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু ছুরাইয়ার অধম্য ইচ্ছা শক্তিতে এখন আশির্বাদ হবে বলে আমরা মনে করি। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়ার স্বপ্ন পূরণে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে আসবেন। এতে উদাহরণ হয়ে থাকবে ছুরাইয়া। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়ারাও পারে সব কিছু করতে।

প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিবন্ধী মেয়েডারে দেইখা আমরা মনে করতাম এডারে দিয়ে কি করবো। এহন দেহি ও অনেকখানি নেহা পড়া কইরা ফেলাইছে। আমরা সরকারের কাছে দাবী করছি তারে সহযোগিতা করার জন্য।

বাবা শেরপুর চরপক্ষীমারী বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল স্কুলের সহাকারী প্রধান শিক্ষক মো: ছফির উদ্দিন জানান, আগে আমরা মনে করতাম সে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু সে যখন জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর আমাদের বিশ্বাস হয়েছে সে একটা কিছু করতে পারবে। আমার মেয়েটির আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য তার মায়ের ভূমিকাও অনেক।

মা, মুর্শিদা ছফির জানান, আমি আমার মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ করতে সরকার এগিয়ে আসবেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবন্ধী কোঠায় হলেও যেন স্থান পান।

প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া ভাঙ্গা কন্ঠে জানায়, আমি ফাস্ট ক্লাশ অফিসার হতে চাই।

শেপুরের জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদ জানান, আমরা জানতে পারলাম দুই পায়ে লিখে প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবে। কারণ সে কারো সাহায্য ছাড়াই দুই পায়ে লিখেই এ পর্যন্ত এসচে। আমরা ওই মেয়ের লেকা পড়া চালিয়ে যেতে সবধরনের সহযোগিতা করবেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: