শিরোনাম

South east bank ad

ঝালকাঠিতে জমিসহ ঘর পেলেন ৩১৯ পরিবার, আশার চেয়ে বেশি পেয়ে আনন্দের বন্যা তাদের

 প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি)

ঝালকাঠি সদরের কৃষ্ণকাঠি টাইগার স্কুল সংলগ্ন জাবেদ খান শ্রমজীবীর কাজ করেন। ছোটবেলা থেকেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে তাকে বেছে নিতে হয় শ্রমজীবীর পেশা। শুকনো মৌসুমে ইটভাঁটার শ্রমিক আর বর্ষা মৌসুমে ইজিবাইক চালক। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট জাবেদ। তার পিতা আনোয়ার হোসেন রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করতেন। গাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙে যায় আনোয়ার হোসেন খানের। তাকে সুস্থ করতে সহায়-সম্বল যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেছে। এখন আছে শুধু বসতঘরটি। বাবার একটি ঘর পাঁচজনে ভাগ করলে আর কি থাকে। ঘরের জন্য আবেদন করে ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন জাবেদ। নতুন পাওয়া ঘর ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বললেন, টিনশেড পাকা ঘরটি তার খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারব।

বাসন্ডা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি (বিকনা) আ. জব্বার মাঝির ছিল ১২ কাঠা জমি ও ১১ জন সন্তান। শ্রমজীবীর কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। শেষ বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হন আ. জব্বার। সন্তানরা পিতাকে সুস্থ করতে জমি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা খরচ বহন করেছেন। ঘরের বসতভিটার বাইরে আর একখন্ড জমিও নেই তার। ১১ সন্তানের মধ্যে মেয়ে সাতজন ও ছেলে চারজন। ছেলেরা সবাই শ্রমজীবীর কাজ করে এবং মেয়েরা গৃহপরিচারিকার কাজ করে। আ. জব্বারের মেয়ে বিউটি বেগমের পাশের গ্রাম লাটিমসার লস্কর বাড়ির এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ে তিন বছরের মধ্যে একটি পুত্র সন্তান হওয়ার কয়েক মাস পরেই ছেলে সন্তানসহ ফেলে রেখে চলে যায়। গৃহপরিচারিকার কাজ করেই ভাড়া বাসায় থেকে ছেলেকে পড়াশোনা করানো, নিজেদের সংসারের খরচ বহন করে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছিল বিউটি। বিনা খরচে সরকারি ঘর বরাদ্দের জন্য করলে একখানা ঘর বরাদ্দ পাই।

দীর্ঘ ৪০ বছর বয়স পার করে অবহেলা-কষ্ট উপেক্ষায় জীবনযাপন করে নিজের নামে তিনি পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ। তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না বিউটির। বিউটি জানান, স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকে অনেক কষ্ট করে চলতেছি। মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেটাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। থাকার কোনো জায়গা নেই। এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ঘর দিচ্ছে তাতে শুকরিয়া। এত সুন্দর ঘর আমাদের দেবে তা ভাবতে পারিনি। ভাবছিলাম, টিন-কাঠের ঘর পাব। পেয়েছি পাকা ঘর। আহ কি আনন্দ।

বৃদ্ধ ভ্যান চালক হতদরিদ্র মো. শাহজাহান মিয়া (৬০)। বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে থাকতেন উপজেলার বড় কৈবর্তখালী গ্রামের একটি জরাজীর্ণ ঘরে। বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তিনি। তবে রাতের আশ্রয়ে ছিল তাঁর শঙ্কা। কারণ, তাঁর ভাঙা ঘরে তরুণী মেয়েদের নিয়ে থাকতে হতো। তিনিও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর। ঘর পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজাহান মিয়া আগেবাগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বলেন, ‘মুই দলানে থাকমু! এয়া কোনদিন স্বপ্নেও দেহিনাই। মাইয়া পোলা লইয়্যা এহোন ইট্টু শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। মুই দোয়া হরি, শেখ হাসিনারে যেন আল্লাহ নেক হায়াত দেয়।’

ঝালকাঠি জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩১৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে ধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর। এর মধ্যে রয়েছে ঝালকাঠি সদরে ১২, নলছিটিতে ৭০, রাজাপুরে ৩৭ ও কাঁঠালিয়ায় ২০০টি। সবগুলো ঘর প্রস্তুত রয়েছে, রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে উদ্বোধনের পর ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন তাদের ঘর বুঝিয়ে দিবে। ঘর পাওয়ার অধীর আগ্রহ নিয়ে আছেন নলছিটি উপজেলার নাঙ্গুলী গ্রামের দিনমজুর মো. ইছাহাক (৫৫)। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে এতোদিন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। ভূমিহীন ও গৃহহীন এ পরিবারটি পাচ্ছেন উপজেলার চরবহরমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর। আনন্দে আপ্লুত ইছাহাক বলেন, মুই ভাবতেই পারিনায় জমি ও ঘর পামু। পোলাপান নিয়া এহন একটু নিরাপদে থাকতে পারমু। নামাজের বিছনায় বইয়্যা আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি।

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেতে যাচ্ছেন উপজেলার তিমিরকাঠি গ্রামের পারুল বেগম (৬০)। তিনি বলেন, আমার কোন জমি ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাইতাম। এহন একটু মাথা গোজার ঠাঁই অইছে। প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছেন, আল্লায় ওনারে যেন আজীবন মানসের সেবা করার তৌফিক দেন।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘লাখ লাখ আশ্রয়হীন মানুষকে বিনামূল্যে জমি ও তাতে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া, এটা পুরো পৃথিবীতে একটি অনন্য নজির। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আশ্রয়হীন মানুষকে জমিসহ ঘর দিচ্ছি। যারা এতোদিন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন, তাদের এখন স্থায়ী একটি আবাস হলো। ঘর পাওয়া মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এমন একটি মহৎ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত মনে করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: