শিরোনাম

South east bank ad

আল্লাহ সুন্দরভাবে কথা বলা এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণকারীকে ভালোবাসেন

 প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ইসলাম ও জীবন

আল্লাহপাক সুন্দরকে পছন্দ করেন। সুন্দরভাবে কথা বলা এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণকারীকে তিনি ভালোবাসেন। সামান্য কারণে আমরা একে অপরের সঙ্গে মন্দ ভাষায় কথা বলি, যা মোটেও ঠিক নয়। এছাড়া কারণে-অকারণে অনেকে যারা খুব বেশি কথা বলেন, তাদেরকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না।

প্রবাদ আছে, ‘কম চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই অধিক কথা বলেন’। ব্যক্তিত্বহীন মানুষের অভ্যাস হলো অকারণে বকে যাওয়া। বেশি বলাতে যেমন বোকামি প্রকাশ পায়, তেমনি শ্রোতারও বিরক্তির উদ্রেক হয়। তাই অযথা কথা না বলে কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। বাজে কথা এবং বেশি কথা চিন্তাকে ঘোলাটে এবং ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়।

এডিসন বলেছেন, ‘একজন মানুষ তখনই চমত্কার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে, যখন সে অনর্থক কথা বলা এবং অপকর্ম থেকে বিরত থাকে।’ আসলে কেউ যখন অহেতুক কথা বলতে থাকে তখন এর মাঝে নানান মিথ্যা এবং মন্দ কথাও মুখ থেকে বের হয়ে যায়। বিশ্বনবি (স) সম্পর্কে জানা যায় যে, না তিনি কখনো অহেতুক কসম খেয়ে কিছু বলতেন আর না কখনো কোনো খারাপ কথা বলতেন। (বোখারি) মহানবি (স) বলেছেন :‘যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা ও গোপন অঙ্গকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে আমি স্বয়ং তার বেহেশতের জামিন।’ (বোখারি)

মহানবি (স) আরো বলেছেন :‘রাত্রি ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলে ওঠে, সব সময় আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে আমরাও তোমার অনুবর্তিতা করব।’ কাজেই কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে আন্তরিকতার পরশ থাকে। হজরত ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেন, মহানবি (স) বলেছেন :বান্দা যখন ভালোমন্দ বিচার না করেই কোনো কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এতদূর গভীরে নিয়ে যায়, যা পূর্ব ও পশ্চিমের সমান। (বোখারি ও মুসলিম)

বিশেষ করে রাগ উঠলে অনেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারে না আর রাগের মাথায় যা ইচ্ছে তা বলে ফেলে। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই অধিকাংশ ঝগড়ার সূচনা জিহ্বার কারণেই হয়ে থাকে অর্থাৎ কথার সূত্রপাতকে ধরেই ঝগড়ার সূচনা হয়। মানুষ যখন রেগে যায় তখন যদি একপক্ষ চুপ থাকে তাহলে দ্রুত ঝগড়া শেষ হয়ে যায়।

মহানবি (স) বলেছেন, ‘যখন কারো রাগ ওঠে তখন সে যেন পানি পান করে। এরপর বসে যায়। আর এর পরেও যদি রাগ না কমে তাহলে সে যেন বিছানায় শুয়ে পড়ে।’ আল্লাহতায়ালা কোরআন শরিফে ইরশাদ করেছেন :‘তুমি বলো, আমার বান্দারা সর্বদা যেন উত্তম কথা বলে। অন্যথায় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ ও ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৫৩)

এই পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে দুটো জিনিস দেখা যায়, প্রথমত পশুত্ব আর দ্বিতীয়ত মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্ব পরম ধন। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়েই তা লাভ করতে হয়। প্রবাদ আছে, ‘প্রথম যে দিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে শুধু তুমি, হেসেছিল সবে। এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।’ যুগ যুগ ধরে মানুষ অমর হয়ে থাকে কেবল তার উত্তম কর্মের মধ্য দিয়ে।

গর্ব, অহংকার আর বিলাসী জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে নয়। সুন্দরের মাঝেই মনুষ্যত্বের পরিচয়। মানুষের কথাবার্তা, মনোভাব, আদবকায়দার মধ্য দিয়েই সুন্দরের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে। তাই আমাদের সব সময় অযথা কথা না বলে অল্পকথা ও ভালো কথা বলা উচিত। এছাড়া আমরা যেন এমন কোনো কর্ম না করি যার জন্য আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সামান্য বিষয়ে রেগে না গিয়ে বরং ধৈর্য ধারণ করাই একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।

BBS cable ad