শিশু আলিফ অপহরণ ও হত্যায় জড়িত আসামী সাগরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১
গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী পারিজাত এলাকার মোঃ ফরহাদ হোসেন এর শিশু সন্তান মোঃ আলিফ হোসেন (০৫) তার নিজ বাসা হতে নিখোঁজ হয়। নির্খোঁজের পর ভিকটিম এর পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখোঁজি করে না পেয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে, যার নম্বর- ১১৩৫ তারিখ ২৯/০৪/২০২০। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে র্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে হত্যাকারী খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ০২ মে ২০২০ ইং তারিখ আনুমানিক ২১৩০ ঘটিকায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, একটি অপহরণকারী চক্র গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল এলাকায় মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল রেল লাইন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত অপহরণ ও হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মোঃ সাগর (১৯), পিতা-আব্দুর রহমান, সাং- মিয়াপুর, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা, এ/পি-সাং- কোনাবাড়ী পারিজাত (ভিকটিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া), থানা- কোনাবাড়ী, জিএমপি, গাজীপুর’কে গ্রেফতার করে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মোঃ সাগর (১৯) এর ভাষ্যমতে, সে পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তারা তিন বন্ধু মিলে একই রুমে গত ৬ মাস যাবৎ ভিকটিমদের বাড়ির ৩য় তলার ফ্লাটে বাসা ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকুরী করে আসছে। গত এক সপ্তাহ আগে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করায় বাসার মালিক ভিকটিমের বাবা ধৃত আসামীর বন্ধু ও রুমমেট জুয়েল আহমেদ @ সবুজ’কে ভবনের ছাদে উঠে মেয়েদের ডির্স্টাব করার কারণে কয়েকটি চড়-থাপ্পর দেন। উক্ত থাপ্পরকে কেন্দ্রে করে বাড়ির মালিকের প্রতি ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নিতে ধৃত আসামী এবং তার বন্ধু পলাতক আসামী জুয়েল আহমেদ@সবুজ মিলে ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুম করে, পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ভিকটিমের বাবা অর্থাৎ বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আদায় করে উক্ত এলাকা থেকে দ্রুত পালিয়ে যাবে।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ধৃত আসামী সাগর এবং তার বন্ধু জুয়েল আহমেদ@সবুজ গত ২৯/০৪/২০২০ তারিখ ১৬০০ ঘটিকার সময় পরিবারের সকলের দৃষ্টির আড়ালে বাসা থেকে ভিকটিম আলিফ(০৫) কে ডেকে নিয়ে আসে এবং খেলার ছলে তাকে আসামীর ভাড়াকৃত বাসার ছাদে নিয়ে যায় এবং প্রথমে পলাতক আসামী জুয়েল আহমেদ@সবুজ গলা টিপে ধরে এবং ধৃত আসামী সাগর ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশটি একটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর করে তাদের ভাড়াকৃত বাসার পাশের রুমে ঝুটির গুদামের ভিতর রেখে দেয়। এরপর তারা দুই জন উক্ত বাসায় রাত্রি যাপন করে পরদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে যায় এবং আসামীরা বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে কল করে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপন হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে, তবেই ভিকটিমকে ফেরত দিবে অন্যথায় ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। অপহরণকারীরা ভিকটিম এর পরিবারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নগদ ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বলে। বাড়ির মালিক মোঃ ফরহাদ হোসেন ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে গত তিনদিন অপহরণকারীর কথামত গোপনে উত্তরা, আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করে। অবশেষে মুক্তিপনের টাকা বিকাশের লেনদেন এর সময় গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল রেল স্টেশন এলাকা হতে অপহরণ এবং হত্যাকারী অন্যতম মূলহোতা আসামী মোঃ সাগর(১৯) আটক করা হয়। আসামীকে আটকের পর র্যা বের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী সাগর উক্ত খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা জানায় এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয়। আসামী সাগরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম মোঃ আলিফ(০৫) এর অর্ধগলিত মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়।