পেশাদার ও সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের মূলহোতা সেলিম শেখকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪

সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র। ধর্ষণ, জঙ্গীবাদ, মাদকসহ অন্যান্য সকল ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে এসব প্রতারকচক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল র্যাব-৪ এর চৌকস আভিযানিক দল মহানগরীর মিরপুর মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পেশাদার প্রতারকচক্রের মূলহোতা সেলিম শেখ @ শুভ (৩৫), জেলা-বাগেরহাট’কে গ্রেফতার করে এবং প্রতারণার কাজে নানাবিধ নথিপত্র ও সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী ছাড়াও ১০/১২ জন পলাতক সদস্য উক্ত প্রতারণার কাজে জড়িত এবং এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এক বা একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নিকট থেকে প্রতারণা কৌশল সম্পর্কে বিবিধ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতারক সংগঠনের কার্যপদ্ধতি টার্গেট/ভিকটিম/চাকুরীরপ্রার্থী সংগ্রহঃ
ক। চাকুরীর প্রার্থী সংগ্রহঃ প্রতারকচক্রের প্রতিটি সদস্য প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেকার ও অস্বচ্ছল যুবকদের’কে চাকুরী প্রদানের লোভনীয় অফার দিয়ে বেকার যুবকদের ঢাকায় নিয়ে আসে। ভিকটিমদের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে লোভনীয় অফার প্রদান করে। ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে এবং তথ্যাদি সংগ্রহ করে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। এদেরকে প্রতি গ্রাহক/টার্গেট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেওয়া হয়।
খ। ভুয়া উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদানঃ গ্রেফতারকৃত সেলিম শেখ দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে চাকুরিপ্রার্থীদের নিকট বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে তাদেরকে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে এসে ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত।
গ। ভাইভা গ্রহণঃ পরবর্তীতে চাকরিপ্রার্থীদের সাথে ভ‚য়া সরকারী বড় কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে চাকুরীর বিষয়ে ভাইভা নেওয়া হয় যেখানে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকে এবং তাদের কাছ থেকে চাকুরী দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঘ। ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদানঃ ভিকটিম এর নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের জন্য ভ‚য়া নিয়োগপত্র দিয়ে একটি তারিখে তাকে জয়েন করতে বলে। পরবর্তীতে ভিকটিম উক্ত স্থানে যোগদানের জন্য গেলে বুঝা যায় এটি ভ‚য়া নিয়োগপত্র। ভিকটিম সাধারণত অস্বচ্ছল হওয়ার কারণে যাচাই বাছাই না করে নিয়োগপত্র হাতে পেলে তাদেরকে টাকা প্রদান করত। ভিকটিম প্রতি এই টাকার পরিমান ৫-১০ লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা গ্রামের মধ্যশিক্ষিত বেকার ও নিরীহ যুবকদের চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রায় শতাধিক চাকুরী প্রত্যাশিদের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক সেলিম শেখের নিকট হতে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের ০৮ টি ভ‚য়া নিয়োগপত্র, ০৩ টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ০৩ টি এটিএম কার্ড, ০২ টি ল্যাপটপ এবং ০১ প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।