শিরোনাম

South east bank ad

বিয়ের এক বছর পর স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর ধর্ষণ মামলা

 প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   থানার কথা

রাসেল আহমেদ (ময়মনসিংহ):

ময়মনসিংহে বিয়ের এক বছর ঘর-সংসার করার পর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করার অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরীর বিরুদ্ধে। এই বিষয়টি নিয়ে এলাকার মধ্যে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের ইন্দনে দু’পরিবারের বিরোধে ধর্ষণ মামলা করার কথা জানিয়েছেন কিশোরীর স্বজনরা।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানাযায়, ৬ মাস প্রেমের পর ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের দড়ি ভাবখালী গ্রামের মো.ইব্রাহিমের ছেলে মো.দ্বীন ইসলাম ইমন এবং আজিজুল ইসলামের মেয়ে তানজিনা আক্তার মিমের বিয়ে হয় ২০২০ সালের ২৩ জুন। প্রেমের কারনে দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্যহন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বিয়ের এক বছর সংসার করার পর মেয়ে পক্ষের লোকজন কাবিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় ছেলের বাড়িতে। ভাংচুর করা হয় ঘরের দরজা-জানালা। এ ঘটনায় মেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় তার বাবা-মায়ের নামে সাধারন ডায়েরি করেন। এর কিছুদিন পর মেয়েকে তার বাবা-মা নিয়ে গিয়ে বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। আদালতে মেয়েকে দিয়ে তার স্বামী দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও করাতে বাধ্য করেন। গত ২৭ মে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো.রাফিজুল ইসলাম কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগটি রেজিস্ট্রিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন দ্বীন ইসলাম ইমন।

দ্বীন ইসলাম ইমনের মা তাজিনুর বেগম বলেন, তার ছেলের বয়স ১৯ বছর। সে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিবেশি মীমের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। সেই সম্পর্ক থেকেই তাদের বিয়ে দেয় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিল কোতোয়ালী থানার পুলিশও। বিয়ের এক বছর ১০ লাখ টাকা কাবিন দিতে চাপ দেয় মেয়ের বাবা-মা। তাতে রাজি না হওয়ায় তারা মেয়েকে নিয়ে বাড়ি-ঘরে হামলাসহ ছেলের নামে ধর্ষণ মামলা করেছে।

ছেলের বাবা মো.ইব্রাহিম বলেন, ইমন ও মিমের মধ্যে কিভাবে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে তা তাদের জানার বাহিরে ছিল। পরে স্থানীয়দের চাপে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হই। বিয়ের পর থেকেই মেয়ের বাবা-মায়ের নানা অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছি আমরা। না পেরে তাদের নামে থানায় মামলা করতেও বাধ্য হই। কিন্তু প্রতিনিয়ত তাদের হয়রানীর স্বীকার হচ্ছি আমরা। মেয়েকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত আমার ছেলের নামে ধর্ষণ মামলা করিয়েছে। ছেলেটা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। আমাদের যে কি হবে তা বুঝতে পারছিনা।

তানজিনা আক্তার মিমের বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, তাদের মেয়ে মীমের বয়স ১৫ বছর, ছেলের বয়সও কম। তাদের বিয়ের বয়স হয়নি। তবে তাদের মধ্যে প্রেম ছিল। সে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়র ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারসহ কয়েকজন মেয়ে-ছেলেকে বিয়ে দিতে বাধ্য করে। ওরা ছোট, ওদের আবার কিসের বিয়ে। এজন্যই ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে।

মেয়ের মা মাসুমা বেগম পলি বলেন, আমাদের সাথে ছেলেদের সম্পর্ক কোন ভাবেই হতে পারে না। স্থানীয়দের চাপের মধ্যে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। মেয়েকে ছেলের বাবা-মা অনেক নির্যাতন করেছে, ঘরবন্দী করে রেখেছে। যা আমরা মানতে পারেনি। মেয়ের সাথে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এমন আচরন করবে তা কোনদিন ভাবেনি। তারা আমার মেয়েকে বউ হিসেবে কোনদিন মানেনি। তাই মেয়েই ধর্ষণ মামলা করেছে। আমরা আমাদের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।

মীমের খালা মাহমুদা বেগম বলেন, মেম্বার কামাল উদ্দিনের সাথে আমাদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। সেটিকে কেন্দ্র করেই একমাত্র মেম্বারের ইচ্ছাতেই মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। সমস্ত ঘটনার জন্য মেম্বারেই দায়ি। ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে মেম্বার বিয়ের আয়োজন করেছিল। তাকে বিচারের আওতায় আনলে এমন ঘটনা সমাজে তার ঘটবে না।

ভাবখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল উদ্দিন বলেন, মেয়ে-ছেলের সম্পর্কটি স্থানীয়রা জানত। অনেকবার ছেলে-মেয়েকে বুঝানোর পরও তারা তাদের সম্পর্ক চালিয়ে গেছে। পরে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রী-স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করবে এটা কেমনে সম্ভব। মেয়ে তার স্বজনদের প্ররোচনায় পরে এমনটি করেছে, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার বিচার দাবি করছি।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন বলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর ধর্ষণ মামলার অভিযোগের বিষয়ে আদালতে নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

BBS cable ad

থানার কথা এর আরও খবর: