অচেতন করে অটো ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতার করেছে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ

গত (০৫ মার্চ ২০২১) ইং তারিখে দুজন লোক অটো ভাড়া করে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা থানাধীন বিভিন্ন বাজারে কবিরাজী মলম বিক্রি করে।
(০৬ মার্চ ২০২১) তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৫:৩০ ঘটিকার সময় পুনরায় তারা দুইজন একভাবে অটো ভাড়াকরে এবং কৌশলে তারা বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানাধীন ভেলাবাড়ি এলাকায় ফেলে দিয়ে উক্ত ইজি বাইক গাড়িটি (মূল্য অনুমান ১,৬৫,০০০/-) ও একটি পুরাতন স্যাম্ফনি মোবাইল ফোন মূল্য অনুমান ১৬০০/- টাকা এবং সঙ্গে থাকা সামান্য টাকা পয়সা কৌশলে চুরি করে নিয়া যায়। অটোচালক রাস্তায় পড়ে থাকাকালীন পথচারী লোকজন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। ঘটনার বিষয়টি পুলিশ সুপার লালমনিরহাট জ্ঞাত হয়ে ওসি আদিতমারী থানাকে উদঘাটনের নির্দেশ দেয়। পরে মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামী মোঃ আঃ লতিফ (৫৮), এর নাম ঠিকানা সনাক্ত করা সম্ভব হয়। ইতোমধ্যে উক্ত অটোচালক সুস্থ্য হলে তাকে আদিতমারী থানায় ডেকে এনে মূল আসামী মোঃ আঃ লতিফ এর জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি দেখালে সে নিশ্চিত করে যে, ছবিতে দেখা ব্যক্তিটি তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি খাইয়ে অজ্ঞান করে তাহার অটো, মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। অত:পর ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) মোঃ মাসুদ করিম মোবাইল ফোনের সিডিআর সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করে ভিকটিমের সনাক্তকৃত আসামী ১। মোঃ আঃ লতিফ (৫৮), পিতা-মৃত মোবারক হোসেন, মাতা- মৃত বেবি জান বেওয়া, সাং-শহিদ শাহজাহান কলোনী, থানা ও জেলা- লালমনিরহাট। তাকে লালমনিরহাট সদর পুলিশ ফাড়িঁর সহায়তায় গ্রেফতার করে। আসামী অকপটে স্বীকার করে যে, ভিকটিমকে সে এবং তাহার সহযোগী মোস্তাক (৪৫), পিতা- মোঃ মহির, সাং- তালুক সর্বানন্দ, থানা- সুন্দরগঞ্জ, জেলা- গাইবান্ধাসহ বিস্কুটের ভিতরে নেশা জাতীয় বিষাক্ত দ্রব্যাদি খাইয়ে অজ্ঞান করে ভিকটিমের ইজি বাইক, মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা চুরি করেছে। পরে ৩০০০০/-টাকায় অপর আসামী শ্রী সুবাস চন্দ্র রায় (৩৫), পিতা- শ্রী নির্মল চন্দ্র রায়, মাতা- ফুলতি বালা, সাং- উত্তর সাপটানা (রায় পাড়া), থানা ও জেলা- লালমনিরহাট এর নিকট বিক্রয় করেছে। বিক্রয়লব্ধ (১৫০০০+১৫০০০)= ৩০০০০/- মোট (ত্রিশ হাজার) টাকা দুই জনে ভাগ করে নেয়। আসামীর বক্তব্যের সুত্রধরে আসামী সুবাস চন্দ্রকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে যে, ঘটনার দিন রাতে সে আঃ লতিফ এর নিকট হতে একটি চোরাই ইজি বাইক ৩০০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকায় ক্রয় করে এবং ক্রয়কৃত ইজি বাইকটি জনৈক অটো মেকার শ্রী সুকুমার রায় (৩৫), পিতা- শ্রী জলধর চন্দ্র রায়, সাং-কোদাল খাতা, থানা ও জেলা- লালমনিরহাট এর নিকট ৫১০০০/- (একান্ন হাজার) টাকায় বিক্রয় করেছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী অটোক্রেতা শুকুমারকে আটক করা হয়। শুকুমার জানায় সে দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাই ইজি বাইক ক্রয় করে খন্ড খন্ড করিয়া বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করে আসছে। অতঃপর বাদী ও ভিকটিম শুকুমার রায়ের দোকানে থাকা চুরি যাওয়া ইজি বাইকের সামনের জব্দকৃত বাম্পারটি দেখতে পেয়ে সনাক্ত করে। এবং বিক্রয় করা কবিরাজী ঔষধ জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ৩ জন আসামীর বক্তব্যে পলাতক আসামী মোঃ মতিয়ার রহমান (৫০), পিতা- আসমত উল্লাহ, সাং- ইসামত পূর্ব পাড়া, থানা- মিঠাপুকুর, জেলা- রংপুর এবং মোস্তাক (৪৫), পিতা- মোঃ মহির, সাং- তালুক সর্বানন্দ, থানা- সুন্দরগঞ্জ, জেলা- গাইবান্ধাদ্বয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য মিঠাপুকুর থানার সহায়তা নিয়া অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু অভিযানে আসামী মতিয়ারকে পাওয়া গেলেও ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত এবং লতিফের ইজি বাইক চুরির একমাত্র সহযোগী মোস্তাক পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নাই। আসামী ১। মোঃ আঃ লতিফ (৫৮), পিতা-মৃত মোবারক হোসেন, মাতা- মৃত বেবি জান বেওয়া, সাং-শহিদ শাহজাহান কলোনী, ২। শ্রী শুভাস চন্দ্র রায় (৩৫), পিতা- শ্রী নির্মল চন্দ্র রায়, মাতা- ফুলতি বালা, সাং- উত্তর সাপটানা (রায় পাড়া), ৩। উভয়ের থানা ও জেলা লালমনিরহাট ৪। মোঃ মতিয়ার রহমান মতি (৫০), পিতা- মৃত আসমত উল্লাহ, সাং- ইসামত পূর্ব পাড়া, থানা- মিঠাপুকুর, জেলা- রংপুরদের একত্রে করিয়া জিজ্ঞাসাবাদে প্রত্যেকেই অত্র মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ্যভাবে জড়িত মর্মে স্বীকার করে।
ধৃত আসামীদের মধ্য হতে মোঃ আঃ লতিফ ও শ্রী শুভাস চন্দ্র রায় স্বেচ্ছায় কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মতে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদানের ইচ্ছা পোষণ করলে তাদেরকে অদ্য (১২ মার্চ ২০২১)ইং তারিখ বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। অপর দুইজন আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
ধৃত আসামীরা সংঙ্গবদ্ধ আন্তজেলা ইজি বাইক চোরা কারবারী দলের সক্রিয় সদস্য। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা যাচাই বাছাই অব্যাহত আছে।