প্রাচীনকালের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিলো শিকার
মির্জা ইয়াহিয়া : প্রাচীনকালের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিলো আসলে শিকার। তাই আমরা দেখতে পাই মনিষীরাও শিকারে যুক্ত হতেন। মধ্যযুগে পশুপাখি শিকার শৌখিনতা ও বীরত্বের ব্যাপার ছিলো। তাই রাজ-রাজড়ারা এই কাজ করতেন। এই বিষয়টা ৫০ বছর আগে পর্যন্ত ব্যাপক আকারে চর্চা করা হতো।
আমরা নব্বই দশক পর্যন্ত দেখেছি একটু বনেদি বা ধনী যারা- তাদের বাসাবাড়িতে পাখি শিকারের একটি এয়ারগান থাকতো। এটা তখন ক্ষমতা দেখানোর বিষয়ও ছিলো। পাখি শিকার সেই সময় পর্যন্ত কিন্তু পজিটিভভাবেই দেখা হতো। তখন শীতকালে বক বা হাঁস জাতীয় অতিথি পাখি শিকার করতে যাওয়া রীতিমতো পারিবারিক আয়োজনের ব্যাপার ছিলো। অনেকে পাখি শিকার করতে যেতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে।
ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে কোনো এয়ারগান দেখিনি। কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ছিলো কিনা তা-ও মনে নেই। তবে পুরান ঢাকার কোনো কোনো বনেদি বাড়িতে লাইসেন্স করা বন্দুক থাকতো। এয়ারগানের জন্য লাইসেন্স লাগে কিনা তা আমার এখনো জানা নেই।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাখি শিকার স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো। গ্রামগঞ্জে সারাবছরই বিভিন্ন উপায়ে বক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন পাখি শিকার করা হতো। ঢাকা শহরে প্রকাশ্যেই পাখি বিক্রি করা হতো। লোকজন মাংস খেতে এসব পাখি কিনতো। শীতকালে অতিথি পাখি হাতে ঝুলিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় বিক্রি করা হতো। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে অতিথি পাখি রক্ষার প্রচার-প্রচারণা প্রথম শুরু হয় রেডিও-টিভিতে। তারপর পত্রপত্রিকাও অতিথি পাখি রক্ষার পক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে।
এভাবে আস্তে আস্তে পাখি সুরক্ষার পক্ষে মাঠে কাজ শুরু করে পরিবেশবাদীরা। এগিয়ে আসে অনেক এনজিও এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এরফলে সরকারের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়। অতিথি পাখি শুধু নয়, অন্যান্য পাখি সুরক্ষায়ও তারা এগিয়ে আসে। অভিযান চালাতে থাকে। শিকারীদের পাকড়াও করে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কাঁটাবন এলাকায় অভিযান চালিয়েও কিন্তু মাঝেমাঝে বিপন্ন পশুপাখি উদ্ধার করা হয়। এই কাঁটাবন কিন্তু আমার খুব চেনা এলাকা। কারণ এর খুব কাছেই আজিমপুর। কাঁটাবন নিয়ে অন্য একদিন বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রয়েছে।
একটি নিউজ দেখে পুরনো দিনের অনেক কথা মনে পড়লো আজ। এবার সেই খবর নিয়ে বলি, আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে র্যাব বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে কয়েকজন শিকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ভালো বিষয় হচ্ছে- উদ্ধার করা ৭১০টি পাখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এনে অবমুক্ত করা হয়। মুক্ত আকাশে উড়ে যায় সব পাখি। এর চেয়ে ভালো ঘটনা আর কিছু হতে পারে না।
(মির্জা ইয়াহিয়া ,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান। সিটি ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ, এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)