গুলশানে বসছে আরও ৫০০ সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আরও ৫০০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হবে। পুলিশ বলছে, এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো ক্যামেরাগুলোর কারণে এলাকায় অপরাধ ৫০ শতাংশ কমেছে।
গুলশান থানা এলাকায় ২০১৫ সালের ১৫ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি কার্যক্রম শুরু হয়। গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন সমিতির অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে বসানো হয় ১৩০টি ক্যামেরা। এগুলো গুলশান থানায় স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে নজরদারি করা হয়।
গুলশান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই চারটি এলাকায় ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি’ করা হয়েছে। কমিটি এলাকার লোকজনের সহায়তায় ক্যামেরা বসিয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে বসানো এসব ক্যামেরা নিয়ে এলাকাবাসীর ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, মার্চের মধ্যে এলাকাগুলোতে আরও ৫০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নতুন ক্যামেরাগুলোর মান হবে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো ক্যামেরার মানের চায়ে উন্নত। এলাকায় পর্যায়ক্রমে এক হাজারটি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
গুলশান, বারিধারা ও নিকেতন সমিতি পরীক্ষামূলক পর্যায়ের ক্যামেরাগুলো বসিয়েছিল দাতাদের টাকায়। এর জন্য গুলশানের সাধারণ বাসিন্দাদের কোনো অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়নি। এবারেও সিসি ক্যামেরা বসবে দাতাদের অর্থে। বাসিন্দাদের এ জন্য কোনো টাকা দিতে হবে না। এলাকাভিত্তিক সমিতিগুলোই ক্যামেরা দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পুলিশের কাজ শুধু এগুলোর মাধ্যমে নজরদারি করা।
গুলশান থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংযোগগুলোতে লোহার খুঁটি বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। একটি খুঁটিতে দুটি, কোথাও চারটি থেকে ছয়টি পর্যন্ত ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ওই খুঁটিতেই ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) বক্স রয়েছে।
গুলশান থানায় অবস্থিত মনিটরে চোখ রেখে গুলশান, বনানী ও নিকেতন এলাকার যানবাহন চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারি করছে পুলিশ। কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ক্যামেরার আওতায় কোনো ঘটনা ঘটলে দিন-তারিখ মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ফুটেজ বের করা যায়, যা পরে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসব ক্যামেরা। কোথাও যানজট সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা জানতে পারছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এসব সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রতিনিয়ত এসব ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি দেখে চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িত অপরাধীদের ধরা হচ্ছে। ফলে এলাকায় অপরাধ আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
তবে ক্যামেরাগুলোয় তোলা ছবি জুম করে দেখলে অস্পষ্ট হয়ে যায় এমন অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বসানো ক্যামেরাগুলো ৮০ মিটার পর্যন্ত ছবি ভালো থাকে। ১৬০ মিটার দূরের ছবি অস্পষ্ট হয়ে যায়। নতুন বসানো ক্যামেরাগুলো হবে আরও শক্তিশালী, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গুলশান থানায় জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ক্যামেরা নজরদারি নিয়ন্ত্রণকক্ষটি গুলশান পুলিশ ফাঁড়িতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে আরও বড় পরিসরে নিয়ন্ত্রণকক্ষ করা হবে। আর গুলশান এলাকায় বাড়ির মালিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো সড়ক-সংলগ্ন ক্যামেরাগুলোও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে চাই। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাই বিভিন্ন বিপণিবিতান, বিশ্ববিদ্যালয়, এলাকাভিত্তিক সোসাইটিগুলোর সঙ্গে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে আলোচনা করছি।’