ঈদে বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে শিল্প এলাকার ১৯৮ কারখানা

রতি বছর ঈদের আগে শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এ অসন্তোষের ঝুঁকি অন্যান্যবারের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। কারণ অভ্যুত্থানের আগে থেকেই নিয়মিত বিরতিতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে, যা এখনো কম-বেশি চলমান। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিল্প এলাকার কারখানাগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে শিল্প পুলিশ। সংস্থাটির হিসাবে ঈদুল আজহার আগে বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানার সংখ্যা ১৯৮।
শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন শিল্প-কারখানাগুলোর বিষয়ে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য ও প্রেক্ষিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯৮টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের পর্যালোচনা অনুযায়ী, বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন খাতের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৬৯। বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ২২টি। সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএভুক্ত কারখানার সংখ্যা ২৪। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১২ এবং কোনো সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানা রয়েছে ৭১টি।
শিল্প পুলিশের ভাষ্যমতে, অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোয় কারখানা মালিকরা যাতে ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ ঘোষণা না করেন সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে নিজেদের গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্প পুলিশের সব সদস্যকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল গাজী জসীম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কারখানা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বেতন-বোনাস পরিশোধে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা তাড়া দিচ্ছি। ছুটির বিষয়গুলোতেও নজর রাখা হচ্ছে।’
দেশে শিল্প অধ্যুষিত আটটি এলাকা আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটে মোট কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৬০০। এর মধ্যে আশুলিয়ায় ১ হাজার ৮৬৩ ও গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি কারখানা রয়েছে। চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশের আওতাভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৫। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৮০৬টি, ময়মনসিংহে ২৮৪, খুলনায় ৭৬৭, কুমিল্লায় ৩১৬ ও সিলেটে মোট কারখানা রয়েছে ৭৪৮টি।
গত ১৯ মে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ৩ জুনের মধ্যে পোশাক কর্মীদের মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে হবে। তাদের যৌক্তিক দাবি মালিকদের মানতে হবে। তবে অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’