বেসরকারি অংশীদারত্বে চলবে শাহজালাল বিমানবন্দর
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর পুরো বিমানবন্দরটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মিতসুবিশি করপোরেশন এবং পিপিপি অথরিটির প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টার্মিনালের ল্যান্ডিং চার্জ, যাত্রী সুবিধা চার্জ, ডিউটি ফি আয়, কমিশন, হোটেল, অফিস, বিজ্ঞাপন বাবদ ফি ও কারপার্কিং থেকে আয় বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেওয়া হবে। আয়ের একটি অংশ বিমানবন্দর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্য অংশ সেবা খাতে ব্যয় হবে। এ নিয়ে আগামী বুধবার অনলাইন ওয়েবিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান চতুর্থ যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফরম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ মেগা প্রকল্পের ৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ শেষ। এখন বেজমেন্ট, কার্গো-অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সি ট্র্যাকের কাজ চলছে। এই প্রকল্প ২০২৪ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন টার্মিনাল নির্মাণে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের ৫ হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব কোষাগার থেকে। বাকি অর্থ দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। আর জাপানের মিতসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং একটি কনসোর্টিয়াম হিসেবে নির্মাণকাজটি করছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে অংশীদারদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পুলিশ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ সরকার আর চুক্তিভুক্ত কোম্পানি ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল এবং ৩ নম্বর টার্মিনালের আশপাশের উন্নয়নের দায়িত্বে থাকবে; যার মধ্যে বর্ধিতকরণ, পরিচালনা ও বিমানবন্দরের সুবিধা বিদ্যমান। জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এয়ারপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের পরিচালকের প্রদত্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ১০টি বিমানবন্দর উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে মিতসুবিশির। মিতসুবিশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নের কাজেও যুক্ত। তাই নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পর মিতসুবিশি রক্ষণাবেক্ষণে থাকতে চায়। এ প্রসঙ্গে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান বলেন, মিতসুবিশি কোম্পানি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল সরকারের একমাত্র মেগা প্রকল্প, যার কাজ লকডাউনের ভেতরেও চলেছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে। কার্গোর ধারণক্ষমতা ২ লাখ টন থেকে বেড়ে হবে ৫ লাখ টনে। এর ফলে একক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরের মাধ্যমে নতুন টার্মিনালটির সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব হবে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপির ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।