শিরোনাম

South east bank ad

নাভানার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে টয়োটা!

 প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কনজুমার প্রোডাক্টস

নাভানার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে টয়োটা!




বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচল করা প্রাইভেট কারের ৮০ শতাংশই জাপানের টয়োটা কোম্পানির। তাদের প্রায় একচেটিয়া এই ব্যবসা বাড়াতে বড় অবদান রেখেছে টয়োটা গাড়ির বাংলাদেশি পরিবেশক নাভানা লিমিটেড। নানা জটিলতায় বাংলাদেশে শেষ হতে চলেছে টয়োটার সাথে নাভানার পথচলা। নাভানার বাইরে দুটি সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মধ্য দিয়ে একথা জানান দিয়েছে টয়োটা জাপান।


পাকিস্তান আমলে সরকারি ভবন নির্মাণ দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন জহিরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলাম গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে পড়ে ইসলাম গ্রুপের ব্যবসা।


সেই ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাপানের বিখ্যাত টয়োটা গাড়ির একমাত্র পরিবেশক হয় ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নাভানা লিমিটেড। শুরু হয় টয়োটা জাপানের সাথে নাভানার পথচলা।


ওই সময় ঢাকাসহ পূর্ব পকিস্তানের রাস্তায় বেশি দেখা যেত ফিয়াট, মরিস, অস্টিন, ফোর্ড, ভক্সওয়াগনের মতো ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের গাড়ি। এসব ইউরোপীয় গাড়ি হটিয়ে তখন সারা বিশ্বেই বাজার দখলের চেষ্টা করছিল জাপানের টয়োটা। পূর্ব পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশে নাভানার হাত ধরে গাড়ির বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে টয়োটা। ইউরোপ-আমেরিকার গাড়ির চেয়ে কম দামের পাশাপাশি বাংলাদেশে বাজার দখলের পেছনে আরেকটি বড় কারণ বিক্রয়োত্তর সেবা। বেশ সুনামের সাথে সেই সেবা দিয়ে আসছিল নাভানা।



কালের পরিক্রমায় জহিরুল ইসলামের মৃত্যুর পর ইসলাম গ্রুপের ব্যবসা ভাগ হয়ে যায়। নাভানা লিমিটেডের মালিকানা পান তার ছোট ভাই শফিউল ইসলাম কামাল। তিনিও ঝানু ব্যবসায়ী, ইসলাম গ্রুপে থাকতেই ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন দেশে-বিদেশে, নানা খাতে। ১৯৯৬ সালে ইসলাম গ্রুপের ব্যবসা ভাগ হওয়ার পর শফিউল ইসলাম কামালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নাভানা গ্রুপের নামে চলতে থাকে। নির্মাণ ও গাড়ি ব্যবসা ছাড়াও এই গ্রুপে যোগ হয়েছে প্রকৌশল, খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা রকম ব্যবসা।


শফিউল ইসলাম কামাল ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন নাভানা গ্রুপ। একপর্যায়ে ব্যবসায়ে যুক্ত হন তার দুই ছেলে সাইফুল ইসলাম ও সাজেদুল ইসলাম। এর মধ্যে বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম দেখছিলেন নাভানা লিমিটেড বা টয়োটা গাড়ির ব্যবসা। তবে তিনি বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতে শুরু করেন কানাডায়। এদিকে বাংলাদেশে দিন দিন টয়োটার সার্ভিস সেন্টারে সেবার মান খারাপ হতে থাকে।



নানা খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে নাভানা গ্রুপের ব্যাংক ঋণ জমছিল অনেক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নাভানা গ্রুপের ব্যবসাকে সহযোগিতার জন্য ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। কিন্তু এরই মাঝে সাইফুল ইসলাম তথা নাভানা গ্রুপের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে শফিউল ইসলাম কামালের অসুস্থতা। ডিমেনশিয়া রোগের কারণে স্মৃতিভ্রষ্টতায় ভোগেন তিনি। অনেক সময় মানুষকে চিনতে পারেন না। ফলে গ্রুপের কোন প্রতিষ্ঠান কেমন চলছে, সেটি আর বুঝতে পারছিলেন না শফিউল ইসলাম কামাল।


বাংলাদেশ থেকে টয়োটার বিক্রয়োত্তর সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ যাচ্ছিল জাপানে। পাশাপাশি টয়োটার নতুন গাড়ি বিক্রিও কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছিল না। জাপানে টয়োটা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে গাড়ি বিক্রিতে নাভানার কোনো আগ্রাসী পরিকল্পনা বা কৌশলও দেখতে পায়নি।


এসব কারণে নাভানার ডিলারশিপ বাতিল করতে চাইছে টয়োটা কর্তৃপক্ষ। এ জন্য আইনগত দিকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তারা ডিএফডিএল নামের একটি আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে। আর ডিলারশিপ বাতিলের আগে পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থাপন করেছে দুটি সার্ভিস সেন্টার। ঢাকার রেস্তোরাঁ


নাভানার সঙ্গে টয়োটা কর্তৃপক্ষের ডিলারশিপ চুক্তি বাতিল হলেও বাংলাদেশে টয়োটা গাড়ির আমদানি বন্ধ থাকবে না। বরং নতুন ডিলারশিপ দেয়া না হলে উন্মুক্ত হয়ে যাবে টয়োটা গাড়ির আমদানি। তখন যেকোনো আমদানিকারক জাপান বা অন্য কোনো দেশ থেকে টয়োটা গাড়ি আমদানি করতে পারবে।



এ ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে আমদানি করা টয়োটা গাড়ির সিংহ ভাগই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। এই গাড়ি আমদানির জন্য নাভানার ওপর নির্ভর করতে হয় না। শুধু নতুন গাড়ি আমদানি করে নাভানা। অন্য কেউ নতুন টয়োটা গাড়ি আমদানি করতে চাইলেও নাভানার মাধ্যমে আনতে হতো।

BBS cable ad

কনজুমার প্রোডাক্টস এর আরও খবর: