জিটিসির সঙ্গে পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির চুক্তি নবায়ন
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে আরও ছয় বছরের জন্য খনির উৎপাদন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বসংক্রান্ত চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী জিটিসি আগামী ছয় বছরে ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকার বিনিময়ে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর উত্তোলন করবে। এতে এক টন পাথর উত্তোলন খরচ পড়বে প্রায় ১ হাজার ৪৪৫ টাকা, যা আগের তুলনায় প্রতি টনে ২০০ টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) ১৯৭৩-৭৫ সালে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকায় ১২৮ মিটার গভীরতায় কঠিন শিলা আবিষ্কার করে। উত্তর কোরিয়ার মেসার্স কোরীয় সাউথ কো-অপারেশনের সঙ্গে পাথর খনি উন্নয়নে ১৯৯৪ সালের মার্চে মূল চুক্তি হয়।
কয়েক দফা ব্যয় বাড়ার পর ২০০৭ সালের ২৫ মে খনি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে খনিটি প্রতিদিন তিন শিফটে পাঁচ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক শিফটে গড়ে মাত্র এক হাজার টন পাথর উত্তোলন করে আসছিল। ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ছয় বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা।
পরবর্তী সময়ে খনিটিকে সচল রাখতে বেলারুশ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়া জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ও মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিএমসিএল) মধ্যে চুক্তি হয়।
২০১৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর ছয় বছর মেয়াদি এ চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি খনি থেকে প্রথম পাথর উৎপাদন শুরু হয়। নানা বাধা পেরিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খনিটি প্রথম লাভের মুখ দেখে। ওই অর্থবছরে প্রায় ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা লাভ হয়। এর পর থেকেই মুনাফা অব্যাহত থাকে।
জিটিসি পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় পরপর টানা তিন অর্থবছর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করে খনিটি। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২ সেপ্টেম্বর।
নিয়ম অনুযায়ী চুক্তি শেষ হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সাত দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেও তেমন সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় খনির পাথর উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং জিটিসির কার্যদক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা চুক্তি সই করা হয়। যেহেতু ২ সেপ্টেম্বর পূর্ববর্তী চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, এ বিবেচনায় নতুন চুক্তি কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর থেকে।
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) এমডি আবু দাউদ মো. ফরিদুজ্জামান চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সবার সহযোগিতা থাকলে বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।