এশিয়ায় ঊর্ধ্বমুখী এলএনজির বাজারদর

এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম টানা দুই সপ্তাহ ধরে কমার পর আবারো বেড়েছে। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সরবরাহজনিত উদ্বেগের কারণে ফিউচার মার্কেটে জ্বালানি পণ্যটির গড় মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।
এলএনজিসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের বাজারে সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিন ছিল শুক্রবার। শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দিনব্যাপী লেনদেন শেষ হওয়ার পর উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সেপ্টেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির সর্বশেষ সাপ্তাহিক গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২ ডলার ১০ সেন্টে। আগের সপ্তাহে তা ছিল এমএমবিটিইউয়ে ১১ ডলার ৯০ সেন্ট।
ব্রেইনচাইল্ড কমোডিটি ইন্টেলিজেন্সের বাজার বিশ্লেষক ক্লাস ডোজম্যান বলেন, ‘রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাস ক্রেতাদের ওপর সম্ভাব্য মার্কিন বিধিনিষেধ বাজারে নতুন করে চাপ তৈরি করেছে। যদি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে দেশটি থেকে এলএনজি কেনায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হবে এবং অন্য উৎস থেকে বাড়তি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তি এলএনজি বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করছে। এ চুক্তির আওতায় ইইউ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি পণ্য আমদানি করবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানির সুযোগ বাড়বে এবং বাজারে পণ্যটির অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হতে পারে।’
বিশ্লেষকরা জানান, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামি সতর্কতা এবং এলএনজি কানাডা প্রকল্পের প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে ধীর অগ্রগতি বাজারে সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
কেপলার বিশ্লেষক গো কাতায়ামা বলেন, ‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীতলীকরণে গ্যাসের চাহিদা এখনো কম। পাশাপাশি চীনের এলএনজি মজুদও বেশি। ফলে জ্বালানি পণ্যটির দামের ঊর্ধ্বগতি সীমিত থাকবে।’
ইউরোপের বাজারেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে নর্থওয়েস্ট ইউরোপ এলএনজি মার্কার (এনডব্লিউইএম) অনুযায়ী প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার ৩৪ সেন্টে। এটি ডাচ টিটিএফ ফিউচারের তুলনায় ৪৫ সেন্ট কম। অন্যদিকে আর্গাস ও স্পার্ক কমোডিটিজ যথাক্রমে দাম নির্ধারণ করেছে এমএমবিটিইউপ্রতি ১১ ডলার ৩৯ সেন্ট ও ১১ ডলার ৩৭ সেন্টে।
এদিকে মিসরে তীব্র গরমে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশটি অতিরিক্ত এলএনজি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। আর্গাসের এলএনজি প্রাইসিং প্রধান মার্টিন সিনিয়র জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস থেকে একটি এলএনজি চালান মিসরে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে এলএনজি পরিবহনে আটলান্টিক রুটে প্রতিদিনের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫০০ ডলারে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে পরিবহন ব্যয় টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে কমে বর্তমানে প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সরবরাহ উদ্বেগ দাম বাড়ালেও পর্যাপ্ত মজুদ ও দুর্বল চাহিদা এলএনজির বাজারকে বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখিতা থেকে বিরত রাখছে। আগামী সপ্তাহগুলোয়ও দাম সীমিত পরিসরে ওঠানামা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।