মাধবপুরে দখল দূষণে সোনাই নদীর বেহাল দশা:পরিণত হয়েছে দূষিত খালে
শেখ জাহান রনি, (হবিগঞ্জ):
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা সোনাই নদীটি ক্রমেই তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।অবৈধ দখল আর নদীতে ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারনে প্রসস্থ কমে গিয়ে ধীরে ধীরে খালে পরিনত হচ্ছে। সোনাই নদীটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।উপজেলার ধর্মঘর,চৌমুহনী,বহরা ইউনিয়ন ও পৌরসভা হয়ে খাস্তি নদীতে পতিত হয়েছে।
বাংলাদেশে নদীটির প্রবাহ পথের দৈর্ঘ্য ২৪ কিঃমিঃ,প্রস্থ ২৫০ মিটার কিন্তু বর্তমানে দখলের কারনে কমতে শুরু করেছে প্রস্থ।গভীরতা ৫ মিটার তবে দীর্ঘদিন যাবত নদীটি খনন না করার ফলে দিন দিন এর গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে। নদী থেকে ক্রমাগতই একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে যার ফলে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে ফলে সোনাই নদীর উপর নির্ভর করা উপজেলার কৃষি অঞ্চলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুকূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হলেও শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে।তবে শুকনো মৌসুমে এলাকার কৃষিকাজ করার জন্য চৌমুহনীতে এলজিআরডি কর্তৃক দুইটি রাবার ডাম প্রকল্প আছে।
কিন্তু বাংলাদেশের সীমানা পেড়িয়ে ত্রিপুরার তেলিয়াপাড়া শহর ও তার আশপাশের শহরের পানি প্রত্যাহার করে নেয় ভারত।যার কারনে সোনাই নদী আগে যে পরিমান পানি ও পলি বহন করে নিয়ে আসতো এখন তা নেই বললেই চলে। ফলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা কৃষি কাজ করতে গিয়ে ক্ষতির মুখ দেখছেন।অথচ সোনাই নদীর কারনেই মাধবপুরে বন্দর ছিল।নদীতে সারা বছরই চলতো লঞ্চ,ট্রলার ছোট বড় অসংখ্য নৌকা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও আশপাশের উপজেলার মানুষ ব্যবসা বানিজ্য ও জরুরি প্রয়োজনে মাধবপুর বাজারে আসতে সোনাই নদী পথই ব্যবহার করতো।কিন্তু বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় জীর্ণ শীর্ণ ও মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।নদীটি তার স্বকীয়তা হারিয়ে এখন খালে পরিণত হয়েছে। পানি প্রবাহ না থাকায় নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা। বিভিন্ন পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য পাইপ দিয়ে নদীতে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
ফলে ধীরে ধীরে নদীটির পাড় ভরাট হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।নদীটি সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান,এক সময় নদীতে বারো মাসই পানি থাকতো নদীতে সব সময়ই নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলার চলতো।দেশীয় জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো নদীতে। এলাকার কৃষিও ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নদীটি খনন করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ এবং দূষণ ও দখলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জোড়ালো দাবি জানান।
নদীটি খনন ও রক্ষা করার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,নদীকে ম্যাপ অনুযায়ী বড় করা হবে। নদীর পাড়ের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদীটি যতটুকু ছিল ততটুকু ফিরিয়ে আনা হবে।ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে কাজ শুরু করেছে। আর দূষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,নদী রক্ষা কমিশন একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে আমরা তাদেরকে সহযোগী করছি।কেন্দ্রীয়ভাবে উনারা ব্যবস্থা নিবেন।এইদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যেনো খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হয়।