জিনের বাদশাসহ আটক-৩
গোলাম মোস্তফা মুন্না, (যশোর) :
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) যশোর এর সদস্যরা জিনের বাদশাসহ তিনজনকে আটক করেছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এসময় প্রতারণার কাছে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন. সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের ওসমান সরকারের ছেলে জিনের বাদশা সেলিম সরকার, একই জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুন্দইল গ্রামের মৃত আকাম উদ্দিনের ছেলে দুদু মিয়া ও একই উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ মহন্তর ছেলে তাপস মহস্থ।
পিবিআই এর যশোর ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেদেরকে কখনও ফেরেশতা, কখনও জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে মানুষের সরলতার সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ অর্থসহ স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। আটক সেলিম সরকার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ৪ নভেম্বর গভীর রাতে যশোর সদর উপজেলার পাগলাদহ গ্রামের এ.এস.এম সোহরাবের হোসেনের মেয়ে অত্র মামলার বাদীর মেয়ে সাজনিন খাতুন এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে নিজেকে ফেরেশতা পরিচয়ে সে আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে বলে জানায়। তারপর সাজনিন খাতুনকে জায়নামাজ ও কোরআন শরীফ নিয়ে বসতে বলে এবং সাজনিনের মায়ের অসুস্থতা ও পরিবারের অনেক সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে তার মনকে দুর্বল করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় এবং বলে এই বিষয়ে যেন সে কাউকে কিছু না জানায়, যদি কেউ জানে তাহলে সাজনিনসহ পরিবারের সকলের ক্ষতি করার ভয় দেখায়। তারপর সাজনিন খাতুনের নিকট অভিযুক্ত সেলিম সরকার জায়নামাজ ও উট কেনার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করে। সাজনিন খাতুন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার জন্য ঘরে থাকা তার পিতার বেতন ও জিপিএফ এর উত্তোলনকৃত টাকা হতে অভিযুক্তদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে বিভিন্ন সময়ে ৯২ হাজার ৫শ টাকা এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে বিকাশ নম্বারের মাধ্যমে প্রেরণ করে। গত ৬ অক্টোবর গ্রেফতারকৃতরা সাজনিন খাতুনকে কোতয়ালী থানাধীন পালবাড়ী মূিির্তর মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানির শো-রুমের সামনে আমগাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতরে একটি স্বর্ণের মূর্তি আছে বলে জানিয়ে মূর্তিটি সাজনিন খাতুনকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে এবং নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত স্বর্ণের গহনা রেখে আসতে বলে। গহনা রেখে আসার সময় সাজনিন যেন পেছন ফিরে না তাকায় এই জন্য সতর্ক করে, যদি তাকায় তাহলে আগুনের ঝলক পড়ে পুরো শরীর ঝলসে যাবে বলে ভয় দেখায়। অভিযুক্ত সেলিম সরকার এর কথায় ভয়ে ভীত হয়ে সাজনিন খাতুন কোতয়ালী থানাধীন পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানির শো-রুমের সামনে আম গাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়া থেকে পটেটো চিপসের প্যাকেটে থাকা কথিত স্বর্ণের মূর্তি বাসায় নিয়ে আসে এবং সরল বিশ্বাসে পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণের ৪টি কানের দুল ওজন ২ ভরি ২ আনা, স্বর্ণের গলার চিক ২টি ওজন ১ ভরি ১২ আনা, ১টি স্বর্ণের আংটি ওজন ৮ আনা সর্বমোট ওজন অনুমান ৪ ভরি স্বর্ণ নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের কাগজে মুড়ে রেখে আসে। পরবর্তীতে সাজনিন খাতুন আসামিদের মোবাইলে ফোন করলে অভিযুক্তদের দেয়া সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পায়। ঘটনার বিষয়ে সাজনিন খাতুন তার পিতাকে জানালে সে কথিত স্বর্ণের মূর্তিটি দেখে বুঝতে পারে স্বর্ণের রঙের মুর্তিটি আসলে পিতলের তৈরি।
অভিযুক্ত আটককৃতরা আরো জানায়, সেলিম সরকারের মেয়ে সাজনিন খাতুন এর সাথে কথা বলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোনে টাকা আদায় করে। ৬ নভেম্বর অভিযুক্ত দুদু মিয়া আসামি সেলিম সরকার এর কথামত যশোর পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানির শো-রুমের সম্মুখে আমগাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতরে একটি নকল কথিত স্বর্ণের মূর্তি রেখে আসে এবং নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের থেকে সাজনিন খাতুন এর রেখে যাওয়া সোনার গহনা নিয়ে যায়। অভিযুক্ত সেলিম সরকার এবং দুদু মিয়া ওই স্বর্ণ ও টাকা পয়সা ভাগ করে নেয় এবং প্রতারণা পূর্বক আদায়কৃত স্বর্ণ অভিযুক্ত তাপস মহন্তর নিকট বিক্রয় করে মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। অভিযুক্ত সেলিম সরকার, দুদু মিয়া ও তাপস মহন্ত দেরকে শনিবার (২৭ নভেম্বর) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট ২য় আমলী আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইনের আদালতে সোপর্দ করা হলে গ্রেফতারকৃতরা ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে বলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।