শিরোনাম

South east bank ad

কৃষিবিজ্ঞানীকে মারধর করে গবেষণা প্লট নষ্টের অভিযোগে থানায় মামলা

 প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এক কৃষিবিজ্ঞানীকে মারধর করে ১০ বছর ধরে ৬৬ শতাংশ জমিতে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত ৬২ জাতের ধান একত্র করে নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নূর মোহাম্মদ নামের ভুক্তভোগী ওই কৃষিবিজ্ঞানী সোমবার রাতে বাদি হয়ে তানোর থানায় একটি মামলা করেছেন। সবমিলিয়ে তাঁর প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে- তানোর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবের নির্দেশে তার সহযোগিরা এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- তানোরের গোল্লাপাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই কাজে লেগে যান তিনি। নিজের মাটির ঘরটাকে বানিয়ে ফেলেন গবেষণাগার। সেখানেই তিনি ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন শুরু করেন। এ পর্যন্ত সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক। এগুলোর মধ্যে চার-পাঁচটি ধান জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে তিনি খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে পান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গোল্লাপাড়া গ্রামে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় স্থানীয় অঞ্জন মালাকারের (৪৫) জমির ধান কাটা হচ্ছিল। সেখানে টিটু নামের চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন সরদারের নেতৃত্বে ২৪-২৫ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছিলেন। পাশে নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ছোট ছোট অংশে বিভিন্ন জাতের ধান ছিল। এর মধ্যে কিছু ধান কাটা ছিল, কিছু এখনো কাটা হয়নি। তাঁরা নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ৬২ জাতের কাটা ধান একত্র করে এবং জমির খাড়া ধান নষ্ট করে ট্রলি পার করছিলেন। এ সময় তিনি বাধা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাব হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা পুলিশের ভয় করি না। তোর যা করার তুই কর।’ অঞ্জন মালাকার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে, ডেকে নিয়ে আয়। আমরা তোর জমির ওপর দিয়েই ধানের ট্রলি পার করব।’

তাদের প্রত্যক্ষ মদদে কিছু শ্রমিক নূর মোহাম্মদকে অন্যস্থানে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে আর বাকিরা তাঁর গবেষণা প্লট নষ্ট করে ট্রলি পার করে নিয়ে যান। গাড়ি পার করা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ততক্ষণে অভিযুক্তরা চলে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যবলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহাবের মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে আরেক অভিযুক্ত অঞ্জন মালাকার কৃষিবিজ্ঞানীকে মারধর কিংবা হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রথমে তিনি (নুর মোহাম্মদ) ওই জমি দিয়ে ট্রলি নিতে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এতে বাঁধ সাধেন। পরে বাধ্য হয়ে কিছু শ্রমিক তাঁকে ধরে রাখেন এবং বাকিরা সেখান দিয়ে ট্রলি পার করেন। আমরা জানি যে, তিনি একজন কৃষিবিজ্ঞানী। তাকে অপমান-অপদস্ত করার প্রশ্নই আসে না।

এব্যাপারে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, ‘কৃষিবিজ্ঞানীকে মারধর কিংবা হুমকি দেয়া হয়েছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি থানার একজন এসআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: