রামেক হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানি, অভিযুক্তকে বদলি
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। শনিবার (০৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তারের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম ডা. রাফিউল হাসান। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। যৌন হয়রানির পর তাঁকে বরগুণায় বদলি করা হয়েছে। আর ভুক্তভোগী ওই নারী চিকিৎসক এখনও রামেক হাসপাতালে কর্মরত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তারের মহাপরিচালক জানান, সম্প্রতি কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে তাঁকে ২৯ আগস্ট শুনানির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ডাকা হয়। এ অবস্থায় কী করা যায় সেই পরামর্শ করার জন্য তিনি ডা. রাফিউল হাসানের খোঁজ পান। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁকে ২৪ আগস্ট অফিসে দেখা করতে বলেন। সেদিন বিকালে তিনি দেখা করতে গেলে ডা. রাফিউল হাসান তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। নিজেকে অধিদপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা উল্লেখ করে ওই নারীকে বলেন, তাঁর এই বিপদ থেকে শুধু তিনিই তাঁকে উদ্ধার করতে পারেন।
সেদিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে ওই নারী চিকিৎসককে ভয় দেখান ডা. রাফিউল। সান্তনা দেওয়ার নামে তিনি ওই নারীর পিঠে ও ঘাড়ে হাত দেন। শেষে কোনরকম পরামর্শ দেওয়া ছাড়াই পরদিন সকাল ৯টায় আবার দেখা করতে বলেন। কিন্তু তাঁর পৌঁছাতে আধাঘণ্টা দেরি হয়। এ কারণে তিনি কথা না বলে আবার বিকাল ৪টায় আসতে বলেন। কথা অনুযায়ী, সময়মতোই হাজির হন ওই নারী চিকিৎসক। কিন্তু তখনও তাঁকে এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। এরপর বিকাল ৫টা বাজলে অফিসের সবাই চলে যেতে থাকেন। তখন ডা. রাফিউল ওই নারী চিকিৎসককে তাঁর পাশের চেয়ারে বসতে বলেন। এতে তিনি রাজি না হলে ডা. রাফিউলই উঠে এসে পেছন থেকে ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেন। শুধু তাই নয়, ওই নারীর স্পর্শকাতর অংশে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই নারী চিৎকার দেওয়ার কথা জানালে ডা. রাফিউল বলেন, বিনিময়ে কিছু না দিলে তাঁকে কেন তিনি সাহায্য করবেন কেন? তখন জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে ওই কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক আরও বলেন, ডা. রাফিউলের অফিস কক্ষটি এমনভাবে সাজানো যে, দরকার খোলা থাকলেও ভেতরে তাঁর ডেস্কের কাছে কী হচ্ছে তা কেউ দেখতে পারবে না। সে কারণে তিনি সুযোগটা নিয়েছিলেন। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি তাঁর যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে ডা. রাফিউল হাসান জানান, এসব বিষয় নিয়ে এখন তিনি কথা বলতে চান না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসারকে বরগুনা জেলার একটি মফস্বল এলাকায় বদলি করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্তও করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।