জনস্বার্থের বাইরে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই : সাংসদ রিমন
এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করার প্রতিবাদে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বরগুনা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে বরগুনা জেলার পাথরঘাটার এক শ্রেণীর মানুষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে একের পর এক নিউজ করানোর প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে এমপি রিমন বলেন- তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যতগুলো অভিযোগ উঠেছে, তা জনস্বার্থের বাইরে আছে কিনা সেটা মূল্যায়ন করে নিউজ করার জন্য সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন- গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ছাত্রলীগ কর্তৃক আয়োজিত ফুটবল খেলার প্রধান অতিথি হিসেবে মোটরসাইকেলের রওনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জনৈক নজরুল ইসলাম একটি মাইক্রোবাস এমপি রিমনের গাড়ি বহরের সামনে সামনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে চালাচ্ছিল।
বহরে থাকা ছাত্রলীগ নেতা সামনে গিয়ে সাইট না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম এমপি রিমন সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। এমপি সভাস্থলে পৌঁছালে নজরুল ইসলাম এমপি রিমনের নিকট এসে তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান। নজরুলকে ধাক্কা দিয়ে তিনি ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই বলে সরিয়ে দেন।
কিন্তু ওই ঘটনাকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমপি রিমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে নিউজ প্রকাশ করা হয়েছে। যা দুঃখজনক হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন- নজরুল ইসলাম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। অথচ আদৌ তিনি আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের সাথে জড়িত ছিল না। ওই নজরুল ইসলামের নামে পাথরঘাটা থানায় ৭ টি মামলা চলমান রয়েছে। নজরুল ইসলাম স্থানীয় মানুষের মুখে বোমা নজরুল ও টপ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন- যে নিউজগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে; সেই সকল মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুরা আমার সাক্ষাতকার নিলে তথ্যগত ভুল হতো না। আমার কোন সাক্ষাৎকার না নিয়ে সংবাদ প্রচার বা প্রকাশ করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা সব সময় আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অসত্য তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় সহযোগিতা করেছে।
এমপি রিমন তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন- ২০১৭ সালে পাথরঘাটা হাসপাতালে ডাক্তার মোসাঃ শাহনাজ পারভীন ডিউটি না করে অন্যত্র অবস্থান করে আসছিল। পরে আমার নজরে আসলে হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক এর সঙ্গে রাগ করেছিলাম; কেন তিনি ডাক্তারের স্বাক্ষর পরবর্তীতে নিয়ে তার বেতন তুলতে সহযোগিতা করেছেন।
অথচ আমার বিরুদ্ধে মিডিয়ায় নিউজ করা হয়েছিল আমি প্রধান সহকারীকে লাঞ্চিত করেছি। পরবর্তীতে ওই ডাক্তার ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৯ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়াও দুই প্রকৌশলীকে মারধর করলেন পাথরঘাটার এমপি রিমন, এমন শিরোনামে নিউজ প্রকাশ হয়েছে।তাও সত্য ছিল না। সরকারি শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যাপক অনিয়ম আমার চোখে ধরা পড়লে আমি সে কাজ ঠিকমতো করতে বলি।
পাথরঘাটায় চায়না প্রজেক্টে চরদুয়ানী বাজার সংলগ্ন একটি স্লুইচগেট করতে গেলে সেখানে জনৈক প্রিয়াঙ্কা মিত্র নামের এক নারী রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি ঘর তুলে মন্দির তৈরি করেছে। চায়না কর্তৃপক্ষ প্রিয়াঙ্কা মিত্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছে। আমিও ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারি জমি ছেড়ে দিতে বলেছি। অদ্য পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কা সেখানে অবস্থান করছে। আজও পারেনি স্লুইজ গেট আজও করতে পারেনি।
অথচ আমার বিরুদ্ধে নিউজ করা হয়েছে আমি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেছি। শুধু তাই নয়, পাথরঘাটার বাঁশ তলার হোসনে আরা রানীর ভাইয়েরা অবৈধ পিলার ও তক্কনাথ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যারা নিজ ঘরে বসে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
কাঠালতলী বাবুরহাটের নিকট জেলা পরিষদের জায়গায় টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ঘর তুলতে গেলে স্থানীয় লোকজন আমাকে অবহিত করে। আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এজন্য আমাকে আমার পিতামাতা তুলে গালি গালাজ করেন রানী। অথচ অসুস্থতায় আমি রানীর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলে ২ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করেছি। এমনিভাবে সর্বদা জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।
সাংসদ রিমন তার লিখিত বক্তব্যে বলেছেন আমি একজন এমপি ছাড়াও বরগুনার সাধারণ মানুষ। ভুলত্রুটির উর্ধ্বে কেউ নয়। আমার জানামতে আমি কোনো অন্যায় করিনি। ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করিনি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখি। আমার জীবনে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করিনি। সব সময় জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একের পর এক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে।
তাই তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন কিছু শুনবেন, দেখবেন, অন্তত আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে নিউজ করলে দুঃখ থাকবে না। কারো দ্বারা বাধ্য হয়ে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করলে কষ্ট পাই। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতেও তিনি অনুরোধ জানান।
বিগত ৮ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সাথে আজ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন ছাড়া বসেননি। জানাননি তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো নিয়ে তার সাথে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে সাক্ষাৎকারের জন্য মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায় না কেন? সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি তার ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে শুধরে নিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মৃধা, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু সহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।