বাবার টাকা পাঠানোর আগেই ডেঙ্গুতে মারা গেলেন জবি শিক্ষার্থী
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আল-আমিন লেবু মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসছে।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর মিরপুরে নিজ মেসে তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের রঞ্জন তেঘর গ্রামে। রাতেই বাবা কাছে ফোনে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা চেয়েছিল। সে টাকা পাঠানোর আগেই মারা গেলেন ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আল-আমিনের সহপাঠী বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে আল-আমিন মারা গেছেন। আমরা একই রুমে থাকতাম। কয়েকদিন ধরে আমি বাড়িতে আছি।
বুধবার আল-আমিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল জ¦র ১০৪ ডিগ্রি, ঠান্ডা, কাশি। সবার দোয়া কামনা করছি। সেই পোস্ট দেখে আমি ফোন করে ডাক্তার দেখাতে বলি। বাসার সামনেই ডা. আজমল হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার ভোরে অবস্থার অবনতি হলে রুমের অন্যরা তাকে ওই হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সে মারা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, আল-আমিন লেবু তিন ভাই ও মা-বাবা নিয়ে তাদের পরিবার। ভাইদের মধ্যে সে মেজো। বড়-ছোট ভাই ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। বাবা শামছুল রহমান ঘুটা (গোবর শুকিয়ে তৈরি করা জালানি) বিক্রি করে। হতদরিদ্র বাবা কষ্ট করে আল-আমিনকে লেখাপড়ার খরচ বহন করেন। কষ্ট করেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আল-আমিন লেবু লেখাপড়া করতো। তার পরিবার সুখের আশায় কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করায়। একদিন আল-আমিন লেখাপড়া শেষ করে ভাল চাকুরির মাধ্যমে তার পরিবারের সুখের দিন ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। তার আগেই ডেঙ্গু জ¦রে প্রাণ চলে গেল আল-আমিনের।
আল-আমিনের চাচা আবু সাঈদ বলেন, ডেঙ্গু জ¦রে মারা গেছেন আমার ভাতিজা। গত বুধবার রাত ৩টার দিকে আল-আমিন মোবাইল ফোনে তার বাবাকে জ¦রের কথা বলেন। তিনি চিকিৎসার জন্য বাবার কাছে কিছু টাকাও চান। বাবা শামছুর রহমান ঘুটা (গোবর শুখিয়ে তৈরি করা জ¦ালানি) বিক্রি করে বৃহস্পতিবার সকালে টাকা পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার টাকা পাঠানোর পূর্বেই মারা গেলেন আল-আমিন। বাবার সঙ্গে এটাই ছিল তার শেষ কথা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিল সে। কিছুক্ষণ পর আল-আমিনের লাশ নিয়ে তার পরিবার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। বিষয়টি বেদনাদায়ক।