২ লাখ টাকায় নতুন জীবন ফিরে পেতে পারেন শিশু ইমলা
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
ফুটফুটে কন্যা সন্তান আয়াতী খাতুন ইমলা। রাজশাহী নগরীর বিলসিমলা বন্ধ গেট এলাকার জালাল খান গোলাপের ২ বছর ৮মাস বয়সী মেয়ে। এই বয়সে ইমলার ছোট ছোট পায়ে গুটি গুটি করে হাঁটা কিংবা দৌঁড়ে বেড়ানোর কথা। দুরারোগ্য মিনিংগোসেলে থমকে গেছে ইমলার শিশুকাল। আনন্দের পরিবর্তে মেয়ের জীবন নিয়ে পিতা-মাতার দিন কাঁটছে বিষাদে। সেই সাথে ইমলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাটছে যন্ত্রণার জীবন। ছোট্ট এই শিশু ইলমার কান্নার শব্দে ভারি হয়ে আসছে বিলসিমলা এলাকার বাতাসও।কিন্তু ব্যবস্থা হচ্ছে না তার চিকিৎসার।
মাত্র দুই লাখ টাকা হলেই ইমলার শরীরে অস্ত্রোপচার সম্ভব। এই অস্ত্রোপচার হলেই নতুন জীবন ফিরে পাবে ইমলা। কিন্তু এই টাকা জোগাড়ের ক্ষমতা নেই তার অসহায় বাবার। টাকার অভাবে করানো যাচ্ছে না অস্ত্রোপচার। আর তাই ছোট্ট শরীরে বড় টিউমারের মতো মিনিংগোসেল নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে ইমলা। মেয়েটির বাবা জালাল খান গোলাপ একজন চা বিক্রেতা ছিলেন। একমাত্র চায়ের দোকানই ছিল তার আয়ের উৎস। ২০১২ সালে একটি দুর্ঘটনার পর তাকে সেই চায়ের দোকানও ছেড়ে দিতে হয়। এরপর এরকম বেকার বসে আছেন তিনি। সংসারের চালান তার মেজ মেয়ে।
কিন্তু তার সামান্য আয়ের টাকায় শিশু ইমলার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা অসম্ভব। ফলে চিকিৎসার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে এক দরজা থেকে আরেক দরজায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাবা জালাল খান। কিন্তু এখনো সাহায্যের হাত বাড়াননি কেউ। তাই শিশুটির জীবন নিয়ে কোনো আশার আলো দেখছেন না তার বাবা।
ইমলার পরিবার জানায়, ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্ম হয় ইমলার। কিন্তু আর দশটা শিশুর মতো সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেয়নি ইমলা। জন্মের পর দেখা যায়, শিশুটির কোমরের কাছে পেছন দিকে বড় আকারের একটি টিউমার। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এটা দুরারোগ্য মিনিংগোসেল। এটি অপসারণে প্রয়োজন অস্ত্রোপচার। শিশুটি কিছুটা বড় হওয়ার পর সেই অস্ত্রোপচার করা কথা বলেন চিকিৎসক। চিকিৎসকরা ইমলাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর ইমলাকে বাসায় নিয়ে আসে তার পরিবার।
কিন্তু তারপর দিন দিন শিশুটির অবস্থা আরও গুরুতর হতে শুরু করে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ হঠাৎ করেই মিনিংগোসেল ফেটে যায়। এতে শিশুটির অবস্থা সংকটাপণœ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সেদিনই শিশুটিকে আবারও রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার।
তখন চিকিৎসরা জানান, শিশু ইমলার শরীরে অস্ত্রোপচার জরুরি। কিন্তু রামেক হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হয় না। চিকিৎসকরা ইমলার অভিভাবকদের ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। শিশুটির বাবা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঢাকায় তার মেয়ের প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারে খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তাৎক্ষণাত তিনি এই টাকা জোগাড় করতে পারেননি। তাই মেয়েটিকে ঢাকায় নেয়া সম্ভব হয়েছিলো না।
অস্ত্রোপচার না করার কারণে ২০২০ সালের ২৫ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফেটে যায় মিনিংগোসেল। শিশুটির বাবা মেয়েকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে এবার চিকিৎসকরা শিশুটিকে আর ভর্তি নেননি। তাকে আবারও ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ঢাকায় নিতে পারছিলেন না তার বাব। পরবর্তীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগীতায় প্রথম দফায় তার ( maderate hydrocephalus) অপরেশন সম্পর্ন হয়।
দ্বিতীয় দফায় তার ( suggestive of a meningocele over sacro-iliac joint) অপারেশন করা জরুরী প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বছরের জানুয়ারী মাসেই তার অপরেশন করার কথা বলেছিলেন। আর অপরেশন করতে প্রয়োজন দুই লাখ টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে তার দরিদ্র পিতা এখনো তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেননি।
শিশু ইমলার বাবা জালাল খান গোলাপ জানান, শুধু টাকার অভাবেই তিনি শিশুটিকে ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারছেন না। মেয়েটি চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছে, চিৎকার করছে। তিনি কিছুই করতে পারছেন না। বাবা হয়ে তিনি মেয়ের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। জালাল খান তার মেয়ের জীবন বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সমাজে এখনও অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি আছেন। তাদের প্রতি আমার আকুতি- আমার মেয়ের পাশে দাঁড়ান। তার জীবন বাঁচান।’
শিশু ইমলার বাবা জালাল খানের সঙ্গে ০১৭২০৩৫৮০০০ নম্বরের মোবাইলে যোগাযোগ করা যাবে। ফুটফুটে শিশু ইমলার জীবন বাঁচাতে এই নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তাও করা যাবে। আর ইমলার বাবার অগ্রনী ব্যাংক ক্যান্টমেন্ট শাখা সঞ্চয়ী হিসাব নং ০২০০০০৩০৪৯৬১৪ নম্বরে টাকা দেয়া যাবে।