৪০ হাজার টাকার কচু চাষে লাখ টাকা বিক্রির আশা
এইচ কবীর টিটো (গফরগাঁও):
তার নাম আব্দুল করিম(৫৬)। পেশায় ছিলেন একজন বাংলাদেশ আনসার সদস্য। অভাব সহ ভালো মন্দ নিয়ে চলছিলো সংসার । হঠাৎ ৯০ সালের দিকে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পড়েযান বিপদে।গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামে কচুচাষে সফলতা পেয়েছেন অমেকেই।তাদের একজনের পরামর্শে আব্দুল করিম তাঁর ৩০ শতক জমিতে ৪ হাজার লতিরাজ কচুর চারা বপন করে।আজ স্বচ্ছলতা এনেছে লতিরাজ কচু। মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে লতিরাজ কচু চাষে প্রতি বছর প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করছে।
গত ২ বছর ধরে কচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুল করিম।
সবজি হিসেবে বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কচুর ব্যবহার বেশ পুরনো। ধারণা করা হয় প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চল, শ্রীলংকা, সুমাত্রা ও মালয় অঞ্চল কচুর উৎপত্তিস্থল। বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে কচুর ব্যবহার অতি প্রাচীন। সুদীর্ঘকাল ধরে সবজি ও ভেষজ হিসেবে কচু ব্যবহৃত হচ্ছে। কচুতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে।
পলি দোঁআশ ও এঁটেল মাটিতে কচু চাষের উপযোগী হলেও আব্দুল করিম বেলেদোঁআশ মাটিতে কচু উৎপাদন করে দেখিয়েছে।
গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের এই কৃষক প্রথম বছরে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ৩০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেন। কম টাকায় বেশি লাভ থাকায় এ বছর তিনি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ৩০ শতাংশ জমিতে চাষ আবারো চাষ করেন। অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে কচুর চারা রোপণ করতে হয়।
দুই মাস পর থেকে কচুর লতি বিক্রি করা যায় এবং লতি বের হওয়া বন্ধ হলে কচু বিক্রি করে দিতে হয়। আর বিক্রি চলে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত। কচু চাষে বেশি খরচ হয় না। কচুর চারা রোপণের ২০ দিন পরপর ৬ মাস পর্যন্ত হালকা নিড়ানি দিতে হয়।
কচু গাছের যখন তিন মাস বয়স হয় তখন গাছের গোড়ায় যে লতি বের হয় তা কেজিপ্রতি খুচরা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ১লাখ টাকার কচুর লতি বিক্রি করেছেন বলে জানান, আব্দুল করিম। এরপর কচু বাজারজাত করার উপযোগী হয়।
৩০ শতাংশ জমিতে কচু চাষে মজুরি ও যাতায়াত খরচসহ মোট উৎপাদনসহ সব মিলিয়ে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ কচু চাষে লাভ হয় প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো। এ কচু বাড়ি থেকে পাইকাররা ও করিম নিজে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি হয়। তাই কৃষি বিভাগের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ধান চাষের চেয়ে এই কচু চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
তবে কিছু অজানা রোগের (কচুর উপরে ঠোসকা ঠোসকা পড়ছে) কারণে অল্প সমস্যা হয়। তবে সঠিক পরামর্শ পেলে ভবিষ্যতে যে জমি আছে তাতে এ কচু চাষ শুরু করবে বলে জানান। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক সুলতান,মাসুদ,হেলালের সাথে কথা হলে তারা জানান, আব্দুল করিমের একক প্রচেষ্টায় এমন সফলতা আসছে যা ভাবার মত। অনেকেই তার এই চাষ দেখে ভবিষ্যতে লতিরাজ কচুর (পানি কচু) চাষ করবে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, গফরগাঁও উপজেলায় লতিরাজ কচু চাষ করছেন অনেকেই। ২৭০ জন কৃষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।কচু চাষের উপর উপজেলা কৃষি অফিস কৃষি মেলার আয়োজন করে কচু চাষে উৎসাহিত করা হয়।
তাদের আরো বেশি সফলতার জন্য কাজ ও সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের কচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তবে এই কচুতে যে অজানা রোগে ধরেছে সেই জন্য কচু চাষের জমিতে গিয়ে নমুনা আনতে হবে। এটা পরীক্ষা করে সঠিক পরামর্শ দেয়া হবে।