শিওরক্যাশ বন্ধ : বিপাকে চার ব্যাংক

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে ভাতা প্রদানের মাধ্যমে একসময় পরিচিতি পাওয়া প্রগতি সিস্টেমসের সেবা শিওরক্যাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চারটি ব্যাংক বিপাকে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি তিনটি ব্যাংকও এই সেবার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
সম্প্রতি প্রগতি সিস্টেমস তাদের মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে এই চারটি ব্যাংকের গ্রাহকরাও। ফলে দেশে বৃত্তি, ভাতা বিতরণ, ভর্তুকি প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে এই ব্যাংকগুলোর যে সেবা ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে করে বেশ কয়েক লাখ সুবিধাভোগী এখন সমস্যায় পড়েছে।
শিওরক্যাশ মূলত প্রগতি সিস্টেমসের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্র্যান্ডের নাম। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রযুক্তি, পরিবেশক, এজেন্ট ও ব্যবসা উন্নয়ন পরিচালনা করে থাকে প্রগতি সিস্টেমস। তবে গত বছর হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি সেবার ধরন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। ফলে বিপাকে পড়ে যায় ব্যাংকগুলো।
কারণ শিওরক্যাশ বন্ধ হওয়ায় ল্যাকটেটিংমাদার সহায়তা কর্মসূচি, আখ চাষিদের ভর্তুকি, পল্লী বিদ্যুতের বিল, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বেতনসহ বিভিন্ন সেবা ছিল তাদের কাছে। এক সময় শিওরক্যাশের মাধ্যমে সরকার প্রাথমিকের উপবৃত্তি বিতরণ করলেও সম্প্রতি উপবৃত্তি বিতরণ নিয়ে নানা অনিয়ম ও জটিলতার প্রেক্ষিতে ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’কে এটি বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক মাস ধরেই সেবা গুটিয়ে আনছিল প্রগতি সিস্টেমস। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ পর্যায়ে কয়েক দফা কর্মী ছাঁটাই করেছে অপারেটরটি। বর্তমান সময়ে এই খাতের প্রতিযোগিতা আর প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনে অনেকটা পিছিয়ে পড়াতেই ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিল না অপারেটরটি।
শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত খান সম্প্রতি বলেছেন, এই সেবায় আমাদের অনেক খরচ করতে হতো, কিন্তু সেভাবে মুনাফা আসত না। এ জন্য সেবার ধরন পাল্টে ফেলতে চাইছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মীও কমিয়ে এনেছি। আগে শিওরক্যাশ পরিচালনার দিকটা যেভাবে দেখা হতো, এখন তা আর হবে না। এখন ব্যাংকগুলোই এই সেবা পরিচালনা করবে। তবে ব্যাংক চাইলে প্রযুক্তি সেবা আমরা দেব।
জানা গেছে, পেমেন্ট সিস্টেমস অপারেটর (পিএসও) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড এখন তাদের লাইসেন্সকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি)-এ রূপান্তর করতে আবেদন করেছে। আর এর শর্ত হিসেবেই পিএসও সেবা আগে বন্ধ করতে হতো।
সেবাটি বন্ধ হওয়ার আগেও তাদের সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ সক্রিয় গ্রাহক ছিল। তবে সব মিলে ২ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহক শিওরক্যাশে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এক সময় মাসে কয়েক শৎ কোটি টাকার লেনদেন হলেও জানুয়ারিতে তা নেমে আসে ১৮০ কোটি টাকায়। আর ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ১১৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর সেবা চালু রাখতে এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে ‘নগদ’।