সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এলআর গ্লোবালের নিয়োগ বাতিল করবে বিএসইসি
সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে নিট দায় (এনএভি) ও পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকা দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করায় ছয় ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৭৮তম কমিশন সভায় গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল ছয়টি ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে। এগুলো হলো এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড। এ ফান্ডগুলো থেকে ২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড হতে তালিকাচ্যুত পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডের ৫১ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণে বিনিয়োগ করা হয়। সে সময় (২০ জুন ২০২২) কোম্পানিটির কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম ছিল না। এছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় ছিল ২ টাকা ৭৪ পয়সা ও পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিনিয়োগের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওটিসি প্লাটফর্মে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। পরে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো থেকে মনোনীত পরিচালকের মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম হয় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড। একই সঙ্গে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৫০ কোটিতে উন্নীত করা হয়। সে সময় ছয়টি ফান্ড থেকে মোট ৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হলেও পুরনো বিনিয়োগকারীদের কোনো ইউনিট দেয়া হয়নি। কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করা হয়নি ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যুকৃত শেয়ার লকইন করা হয়নি। এমন কোম্পানিতে মোট ৬৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোয়েস্ট বিডিসির তৎকালীন পরিচালক রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান (অব.), মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা ও মো. ওমর শোয়েব চৌধুরীকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
কমিশন সভায় এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগকৃত অর্থ সুদসহ মোট ৯০ কোটি টাকা ফান্ডগুলোর বিনিয়োগের অনুপাতে ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত আনতে ব্যর্থ হলে এলআর গ্লোবালের পরিচালক ও সিইও রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি, পরিচালক জর্জ এম স্টককে ১ কোটি ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়।
ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের যথাযথ তদারকি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি) ৩ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় নেয়া হয়। মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় কোয়েস্ট বিডিসির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান সোহাগকে আরো ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।


