South east bank ad

একীভূত ব্যাংক যেন আরেকটি বোঝায় পরিণত না হয়

 প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   বিশেষ সংবাদ

একীভূত ব্যাংক যেন আরেকটি বোঝায় পরিণত না হয়

বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করেই দেশের ব্যাংক খাতে সীমাহীন লুটপাট করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে খাতটি। বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচির প্রথম ধাপেই দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সিদ্ধান্ত যেন দেশের আর্থিক খাতে আরেকটি বড় বোঝায় পরিণত না হয়।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আব্দুল্লাহ ফারুক সম্মেলন কেন্দ্রে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ আহ্বান জানান বক্তারা। ‘‌বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের রূপান্তর: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনা যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাবির ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ ও পলিসি থিংক অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টার (পিটিইআরসি)। অনুষ্ঠানটির গণমাধ্যম অংশীদার ছিল বণিক বার্তা।

আলোচনায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহাম্মদ বলেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতে যা হয়েছে, তা ব্যাংকিং সংকট নয়, পুরোটাই নৈতিক সংকট। নৈতিক সংকটের সবশেষ ভুক্তভোগী ব্যাংক খাত। ফলে জাতীয় সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হয়েছে। এরপর এ অল্প সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের যতটুকু ক্ষত সারানো গেছে, সেজন্য আমরা খুবই ভাগ্যবান। আগামী দুই-তিন সপ্তাহে শীতকালীন সবজি বাজারে এলে মূল্যস্ফীতি আরো কমে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও স্থিতিশীল রয়েছে। রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছলেই আমরা মোটামুটি সুবিধাজনক পর্যায়ে চলে যাব।’

ব্যাংক খাতের সংস্কার কার্যক্রমগুলো আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ একটি কাঠামোয় চলে আসবে জানিয়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘যে সংস্কার কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তা চলতে থাকবে। নতুন ফ্রেমওয়ার্কে ব্যাংকের বোর্ড সদস্যদেরও কেপিআই (মূল কার্যসম্পাদন সূচক) থাকবে। প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক সম্ভাবনা ও ত্রুটিগুলো নিয়েও সামনে কাজ হবে। দেশের তরুণ মানবসম্পদকে পুঁজি হিসেবে ভাবতে হবে। তাদের পুঁজি করা না গেলে আমরা অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়ব।’

২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে (বিএসআরএস) একীভূত করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিল) গঠন করে সরকার। এর পরও এ ব্যাংককে লাভজনক করা যায়নি, বরং এখনো আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়ে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে একীভূত ব্যাংকগুলো যেন আরেক বোঝায় পরিণত না হয়, সে আহ্বান জানিয়ে ঢাবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারপারসন মো. মাকসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা বিডিবিএলের মতো আরেকটি বোঝা দেখতে চাই না। ব্যাংক খাতে নানা নিয়মকানুন থাকার পরও লুটপাট থামানো যায়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ব্যাংক খাতে এ দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এখন সংস্কার নয়, পদক্ষেপ নেয়ার পালা। এ পদক্ষেপ শুরু করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্য দিয়েই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ বলেন, ‘আমরা পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। তবে যা কিছু হয়েছে, সেগুলো শোধরানোর জন্য দরকার আইনি ব্যবস্থা নেয়া। ১০-১২ হাজার কোটি টাকা দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো (একীভূতের তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংক) ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সেজন্যই আমরা একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে অন্যতম সেরা ইসলামী ব্যাংক হবে এটি। আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিটিইআরসির চেয়ারম্যান মো. মাজেদুল হক। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক তামজিদ আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির, বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক (সহসভাপতি) মো. মহসিন মিয়া প্রমুখ।

BBS cable ad