প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৭৫ ডলার ছাড়িয়েছে রুপার দর
বিশ্ববাজারে রুপার দাম গতকাল প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৭৫ ডলার ছাড়িয়েছে। এ সময় স্বর্ণ ও প্লাটিনামের বাজারদরও রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার আরো কমানোর প্রত্যাশা, বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা মূল্যবান ধাতুর বাজারে এ ঊর্ধ্বগতি তৈরি করেছে। খবর রয়টার্স।
স্পট মার্কেটে গতকাল রুপার দাম ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৭৪ ডলার ৬৫ সেন্টে পৌঁছেছে। এদিন বেচাকেনার এক পর্যায়ে মূল্যবান ধাতুটির দাম রেকর্ড ৭৫ ডলার ১৪ সেন্টে পৌঁছে।
স্পট মার্কেটে গতকাল স্বর্ণের দাম দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫১১ ডলার ৭০ সেন্টে দাঁড়ায়। এদিন বেচাকেনার এক পর্যায়ে মূল্যবান ধাতুটির দাম পৌঁছে আউন্সপ্রতি রেকর্ড ৪ হাজার ৫৩০ ডলার ৬০ সেন্টে। এছাড়া গতকাল ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য পৌঁছে আউন্সপ্রতি ৫৪১ ডলার ৩০ সেন্টে, যা আগের দিনের সর্বশেষ দামের তুলনায় দশমিক ৯ শতাংশ কম।
ট্রেডিং প্লাটফর্ম ওএএনডিএর জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক কেলভিন ওয়ং বলেন, ‘মুনাফার আশায় স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তার কারণে বাজারে ডিসেম্বরের শুরু থেকে স্বর্ণ ও রুপার দামের এ ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। বছরের শেষ ভাগে বেড়ে যাওয়া তারল্য সংকট, দীর্ঘমেয়াদে সুদহার কমার প্রত্যাশা, ডলারের বিনিময় হার কমে যাওয়া এবং নতুন করে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি—এসবের সম্মিলিত প্রভাবে চলতি বছর বেশ কয়েকবার রেকর্ড ছাড়িয়েছে মূল্যবান ধাতুর দাম।
কেলভিন ওয়ং জানান, ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৫ হাজার ডলারের কাছাকাছি এবং রুপার দাম ৯০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
স্বর্ণের দামে চলতি বছর ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এ সময় রুপার মূল্য বেড়েছে ১৫৮ শতাংশ, যা স্বর্ণের প্রায় ৭২ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি। কাঠামোগত সরবরাহ ঘাটতি, যুক্তরাষ্ট্রে রুপাকে ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা এবং শক্তিশালী শিল্প চাহিদা এ প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
স্পট মার্কেটে গতকাল প্লাটিনামের দাম ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৪২৬ ডলার ২০ সেন্টে পৌঁছে। এ সময় বেচাকেনার শুরুতে মূল্যবান ধাতুটির দাম রেকর্ড আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৪৪৮ ডলার ২৫ সেন্টে পৌঁছে। প্যালাডিয়ামের দাম ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭৮৮ ডলার ২৭ সেন্টে দাঁড়ায়।
বাজার বিশ্লেষকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর প্লাটিনামের দাম প্রায় ১৭০ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের দাম ৯০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে সরবরাহ সংকট, শুল্ক-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি।
মুম্বাইভিত্তিক রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক জিগার ত্রিবেদী বলেন, ‘শিল্প খাতে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার প্রভাবে প্লাটিনামের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা আগেই ক্রয় বাড়িয়েছেন। তাই দাম কমছে না।’


