শিরোনাম

South east bank ad

অপরাধ নির্মূলে কঠিন কিন্তু নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার

 প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট ২০১৭, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   পুলিশ

অপরাধ নির্মূলে কঠিন কিন্তু  নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার
‘শক্তের ভক্ত নরমের যম’—এই প্রবাদ যেন পাল্টে গেছে তার কাছে। বলা যায়, তিনি ‘শক্তের যম নরমের ভক্ত। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্মূলে তিনি যেমন কঠিন, তেমনি অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তত্পর। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি আছেন আলোচনায়। অনাথ হাবিবার জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন, এসিডদগ্ধ খাদিজা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মৌসুমীর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি প্রশংসা কুড়ান। দিনমজুর আলাউদ্দিনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের মনে দাগ কাটেন। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ও পথশিশুদের বিদ্যালয়কেও সহযোগিতা করেন। সবশেষ তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার টিএ রোডের সেতুটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে আলোচনার জন্ম দেন। ‘হয় আমি থাকব, না হয় মাদক থাকবে’—এমন ঘোষণা দিয়েও আলোচনায় আসেন মিজানুর রহমান। এরই মধ্যে পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র প্রতিফলন ঘটায় বেশ খুশি জেলাবাসী। জেলা-উপজেলার তিন শতাধিক মাদক কারবারি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অনেক মাদক কারবারিই পুলিশের ভয়ে গাঢাকা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ডাকাতি কমে যাওয়ার ঘটনায়ও তিনি প্রশংসিত। বিশেষ করে দিনের বেলায়ও ঝুঁকিতে থাকা সরাইল-নাসিরনগর সড়কে ডাকাতির ঘটনা নেই বললেই চলে। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কসবা উপজেলার মনকসাইর এলাকায়ও ডাকাতির খবর খুব একটা পাওয়া যায় না। গত ২৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে এক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, ওনার (মিজানুর রহমান) বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড দেখে আমি তো মাঝেমধ্যে এসপি মহোদয়কে প্রশ্ন করি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আপনার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে কি-না। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী ওই সভায় উপস্থিত লোকজন বক্তব্যটিকে করতালিতে স্বাগত জানান। ২০১৫ সালের ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন মো. মিজানুর রহমান। এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোপালগঞ্জ থেকে তার বদলি ঠেকাতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের খবরও পাওয়া যায়। মিজানুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসার পর পরই তার কার্যালয়ে ‘উইমেন সাপোর্ট সেন্টার’ চালু করেন। সেন্টারে পারিবারিক বিশেষ করে নারীদের সমস্যা বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা করেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য। সেন্টারটি খোলার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানা-আদালতে নারী নির্যাতন মামলা অনেকটাই কমে গেছে। কেননা, ওই সেন্টার থেকেই বিষয়গুলো মীমাংসা করে দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিত রেখে। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মিজানুর রহমান আসার পর অন্যান্য অপরাধমূলক মামলাও কমে গেছে। তার প্রায় দুই বছরে (২৫ মে পর্যন্ত) আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত যেমন ডাকাতি, খুনসহ ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে ২৪২টি। অন্যদিকে এর আগের আড়াই বছরে এ ধরণের মামলা হয় ৫০৯টি। তার সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, পুলিশের ওপর হামলা ইত্যাদি মামলা হয়েছে সাত হাজার ৬০০টি। এর আগের আড়াই বছরে মামলা হয় ১৪ হাজার ৩৪৪টি। জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দত্ত বলেন, পুলিশ সুপার পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেসব ভালো কাজ করছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। পুলিশিংয়েও তিনি সফল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লার মতে, তাদের দেখা সেরা পুলিশ সুপার হলেন মিজানুর রহমান। এমন পুলিশ কর্মকর্তা সারা দেশেই প্রয়োজন। খেলাঘর আসর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক মো. আবু সাঈদ বলেন, পুলিশ সুপার গতানুগতিক পুলিশিংয়ের বাইরে কিছু ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত রাখতে তাদের বিভিন্ন সংগঠনকে সহযোগিতা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, আমাদের এসপির মাঝে একজন ভালো মানুষের সব ধরণের গুণ আমি দেখতে পেয়েছি। তিনি ভালোবাসা দিয়ে শাসন করেও অনেক কিছু অর্জন করতে পারেন। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে যেটা তিনি করছেন সেটা পুলিশ বিভাগের জন্যও গৌরবের। এ গৌরব পুলিশের ইমেজ সংকট মোকাবেলায়ও কাজে লাগবে। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মাদকমুক্ত করার যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডরোধেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এসব কাজে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
BBS cable ad

পুলিশ এর আরও খবর: