ষষ্ঠ দিনের লকডাউনেও কঠোর পুলিশ, বাইকে ২ জন দেখলেই মামলা

দেশজুড়ে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো চলছে কঠোর লকডাউন। ঘরের বাইরে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখতে আজও কঠোর অবস্থানে আছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিশেষ করে বাইকে দু’জন আরোহী দেখলেই মামলা দিচ্ছে পুলিশ। সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমনই চিত্র দেখা যায়।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অন্যান্য দিনের মতো আজও চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ। ডিএমপির অপরাধ ও ট্রাফিক বিভাগের যৌথ সমন্বয়ে মিরপুর ১৪ থেকে ১০ নম্বরগামী সড়কের প্রান্তে এ চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। এখানকার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়। সরকারি আদেশ অমান্য করে ঘর থেকে বের হওয়াসহ বিভিন্ন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করায় সড়ক নিরাপত্তা আইনের আওতায় এসব মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া ১০ নম্বর গোল চত্বরের প্রতিটি পয়েন্টেই পুলিশ সদস্যরা প্রাইভেটকার, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, যাদের আইডি কার্ড আছে বা যারা জরুরি সেবার আওতায় চলাচল করছেন তাদের ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে যারা আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে পারছেন না বা যারা জরুরি সেবার আওতাভুক্ত হয়ে চলাচল করছেন না এবং ঘর থেকে বের হওয়ার সন্তোষজনক জরুরি কারণ প্রদর্শন করতে পারছেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় পুলিশকে।
বিশেষ করে মোটরসাইকেলে দু’জন আরোহী দেখলেই থামিয়ে মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। মামলা হওয়া মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে আবার দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ নিজের ভুল বুঝতে পারছেন, আবার কেউ পুলিশকে আরও মানবিক হওয়ার দাবি করছেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা (পরিচয় গোপন রাখা হলো) মিরপুর ১৪ থেকে ১০ নম্বর আসার পথে পুলিশের চেকপোস্টে এসে মামলার শিকার হন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এটা ঠিক হয়নি, আমারই ভুল হয়েছে। দু’জন নিয়ে ওঠা উচিত হয়নি।
তবে দু’জন নিয়ে চলাচলের আবার যুক্তিও দাঁড় করাচ্ছেন কেউ কেউ। একই স্থানে একই কারণে দুই হাজার টাকার মামলার ফাঁদে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দুই শিক্ষার্থী। এমন ‘সামান্য’ ঘটনায় দুই হাজার টাকার মামলা বেশ বড় অংকের এবং অযৌক্তিক বলে মনে করেন তারা।
ওই দুই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা উঠানোর জন্য বের হয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে চেক আছে, আমরা দু’জন একসঙ্গেই থাকি। আমরা মেইন রোডেও আসিনি। ভেতরের একটি ব্যাংকে গিয়ে দেখি টাকা নেই তাই শ্যামলী শাখায় যাচ্ছিলাম। আমরা স্টুডেন্ট, আমাদের এতগুলো টাকার মামলা না দিলেও পারতো পুলিশ। আমরা প্রয়োজনে বের হয়েছি, টাকার দরকার।
তবে যে যাই বলুক লকডাউনে চলাচল সীমিত রাখতে জনগণের স্বার্থেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে দাবি পুলিশের। ১০ নম্বর সার্কেলের ট্রাফিক পরিদর্শক মোহাম্মদ কাওছার বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যদি এখানকার কথাই বলি, এখানে তিনটা ফাইলে ৮ ঘণ্টা করে একেকজন পুলিশ দায়িত্বপালন করছেন। এখন যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা সকাল ৬টা থেকে এখানে আছেন এবং দুপুর ২টায় তাদের ডিউটি শেষ হবে। আমরা চেষ্টা করছি লকডাউনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করার। যারা বের হচ্ছেন তাদের নানা কারণ থাকছে ঘর থেকে বাইরে আসার জন্য। আমরা সেগুলো যাচাই করে দেখার চেষ্টা করছি। যারা পরিচয়পত্র দেখাতে পারছেন বা জরুরি চলাচলের কারণ বলতে পারছেন তাদের আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেলে দু’জন যাত্রী ওঠা একেবারেই নিষিদ্ধ। তাই এমন যারা করছেন তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এখানে একজন বাইকচালক আছেন যার বিরুদ্ধে আগে থেকেই তিনটি মামলা হয়েছে। তিনি আজ আবার যাত্রী পরিবহন করছেন।
সাধারণ নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে কাজটি করছি সেটা দেশের জন্য, সাধারণ মানুষদের জন্য। এরপরও আমাদের সঙ্গে অনেকেই খারাপ আচরণ করছেন, অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করছেন, সহযোগিতা করছেন না। আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সবাই পুলিশকে সহযোগিতা করুন। সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতন হলেই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।