দেশীয় শিল্পের অনুকূলে নীতিমালা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ শিল্প প্রতিমন্ত্রীর
দেশীয় শিল্পের অনুকূলে আমদানি-রপ্তানি নীতি, ব্যাংকিং নীতি ও শিল্প নীতিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ দ্রুত বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী।
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে 'শিল্পোন্নত বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন' শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী আজ এ আহবান জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন। বিসিআইসি'র চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অলোচনা সভায় দেশীয় শিল্পের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে করকাঠামো তৈরি করার আহবান জানিয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে যেসকল শিল্প পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলো আমদানির ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি করতে হবে এবং দেশীয় পণ্যের রপ্তানি উৎসাহিত করতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিশেষ ইনসেন্টিভ দিতে হবে। তিনি বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা নিশ্চিত এবং বিটাকের মাধ্যমে এসকল উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা আহবান জানান। শিল্প প্রতিমন্ত্রী এসময় খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোকে আরও তৎপর হবার আহবান জানান।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বত্র স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। যে সকল জমিতে ফসল হয়না সেখানে জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অবকাঠামো উন্নয়ন করে শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে কোয়ালশিন সরকারের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে এ অঞ্চলের শিল্পখাতের বিকাশে বঙ্গবন্ধু ইপসিক গঠন করেন যা স্বাধীনতাউত্তরকালে বিসিক হিসেবে শিল্পখাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও দেশের শিল্পখাতেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর শিল্পকারখানাসমূহ জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সমবায়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে রক্তের ঋণে আবদ্ধ করে রেখেছেন। আন্তরিকতা ও সততার সাথে যার যার দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশকে একটি শিল্পোন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করে জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সভার মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য নির্মূল ও আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে জাতির পিতা কৃষির পাশাপাশি শিল্পকেও যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর শিল্পকারখানার পাকিস্তানি মালিকগণ পালিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু এসকল কারখানাকে জাতীয়করণের মাধ্যমে রক্ষা করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ও বৈষম্য রোধকল্পে সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাক্তি খাতকেও প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বিশেষ করে, নিজস্ব প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যাতে ক্ষুদ্র, কুটির ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পখাত যাতে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু ১ম পঞ্চবার্ষিকীতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ইস্যুতে প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় বিটাকের মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বিসিআইসি'র আওতাধীন শিল্পকারখানাসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।