আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
আনোয়ার হোসেন:
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন।
পাক হানাদার বাহিনী যুদ্ধে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মেধাবী ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী। তার অন্যতম সহযোগী ছিল ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেজাজি, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির ও ক্যাপ্টেন কাইয়ুম।
তাকে এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আলবদর বাহিনী।
প্রধান ঘাতক ছিল, বদর বাহিনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন (অপারেশন ইনচার্জ) এবং আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান জল্লাদ)।
৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে যে অভিযান শুরু করা হয়েছিল এর প্রথম থেকেই বুদ্ধিজীবী নিধন যজ্ঞ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ২৫ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয়।
কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক পরিকল্পনাটি করা হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন করা হয়।
এদিনের রাতে প্রায় ২০০ বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রায়েরবাজার সহ অন্যান্য স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে অমানসিকভাবে নির্যাতন করে, গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর তাদের লাশ ফেলে রাখা হয় মিরপুরের আলোকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, বাংলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর, শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় রায়েরবাজারে।
অপরদিকে ১৪ ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের পাকিস্তানপন্থি সরকারের গভর্নর ডাক্তার মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ পদত্যাগ করে। এদিন গভর্নর মালিক গভর্ণর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের এক মিটিং ডেকেছিলেন। মিটিং শুরু হওয়ার পর যৌথ বাহিনীর বিমান বাহিনী, গভর্ণর হাউজে বোমা নিক্ষেপ করে। গভর্নর মালিক প্রাণ ভয়ে মিটিং বাদ দিয়ে পদত্যাগ করে জীবন বাঁচানোর জন্য তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমান শেরাটন হোটেল) গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
এর আগে পুলিশের আইজি এম এ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৬ জন বেসামরিক কর্মকর্তা একই হোটেলে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
এর মধ্য দিয়েই পূর্ব পাকিস্তানে, পাকিস্তান পন্থী বেসামরিক সরকারের পতন ঘটে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদে প্রকৃত সংখ্যা আজ পর্যন্ত নিরূপণ করা সম্ভব হয় নাই।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আমরা জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের প্রতি রইল আমাদের ঘৃণা এবং ধিক্কার।
(আনোয়ার হোসেন , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)