একাত্তরের এই দিনে
আনোয়ার হোসেন:
আজ ১০ ডিসেম্বর। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার অষ্টম দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ অঞ্চল মিত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ঢাকায় চূড়ান্ত আক্রমন চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকে যৌথবাহিনী। এ দিনে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় ঢাকা রেডিও স্টেশন, কুর্মিটোলা বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও চালনা সমুদ্র বন্দর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এ দিনে শত্রুমুক্ত হয় ময়মনসিংহ জেলা, মাদারীপুর ভোলা ও নড়াইল জেলা।
এদিন রাতে দৈনিক ইত্তেফাকের বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, পিপিআই সংবাদ সংস্থার প্রধান সংবাদদাতা নিজামুদ্দিন, এবং নাজমুল হককে আলবদর আলশামস বাহিনী তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আজ আমরা মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ পরিকল্পনার দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিতে পারি। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তি বাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল মিত্রবাহিনী।মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক মনোনীত করা হয়েছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কে। তার অধীনে দেওয়া হয়েছিল তিনটি নিয়মিত কোর এবং একটি কমিউনিকেশন কোর। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল প্রায় লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার বাহিনী।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা অধিনায়ক মনোনীত হওয়ার পর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে এর সদর দপ্তর স্থাপন করেন। এরপর কোর কমান্ডার নিযুক্ত করেন এবং তাদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে দেন । প্রতিটি কোরের জন্য পৃথক সদর দপ্তর স্থাপন করেন।
দ্বিতীয় কোর: দ্বিতীয় কোরের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়েছিল লেফটেনেন্ট জেনারেল টি এন রায়না কে এবং এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। এ কোরের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল, এবং পটুয়াখালী এলাকা।
চতুর্থ কোর: এ কোরের অধিনায়ক মনোনীত করা হয়েছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগত সিং কে এবং এর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়েছিল আগরতলায়। এ কোরের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা।
৩৩ কোর: এ কোরের অধিনায়ক মনোনীত করা হয়েছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এল থাপানকে , এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছিল শিলিগুড়ি তে। এ কোরের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া এবং পাবনা জেলা। এ কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এল থাপান যুদ্ধে আহত হলে পরবর্তীতে তার স্থলে অধিনায়ক মনোনীত করা হয়েছিল মেজর জেনারেল নাগরা কে।
এভাবে যুদ্ধ পরিকল্পনা প্রস্তুত করে মিত্রবাহিনী পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। সর্বাত্মক যুদ্ধের অষ্টম দিনে এসে মিত্রবাহিনী বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
(আনোয়ার হোসেন , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)