একাত্তরের এই দিনে
আনোয়ার হোসেন:
আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই দিনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় তুমুল হর্ষধ্বনি এবং করতালির মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দেন।
এর ফলে বাংলাদেশ প্রশ্ন বিতর্ক গুণগতভাবে বদলে যায়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সকল প্রকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
একাত্তরের এই দিনে রণাঙ্গনের অবস্থা আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মিত্র বাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে হানাদার বাহিনী বিভিন্ন সীমান্ত ঘাঁটি থেকে পালাতে শুরু করে। এই দিনে ফেনী, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও শত্রুসেনা মুক্ত করে মিত্রবাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে চলে।
অপরদিকে জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভের নিকট বার্তা প্রেরণ করেন। যাতে বলা হয় অনতিবিলম্বে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ না হলে এর দায় ভার মস্কোর উপরই বর্তাবে।
প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ওয়াশিংটনে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বলেন, ভারতকে নিরস্ত্র করতে না পারলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসন্ন মস্কো সফর বাতিল করা হবে।
তাতেও কাজ না হলে শেষ বেপরোয়া চেষ্টা হিসাবে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বাহি সপ্তম নৌবহর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব। আমরা যেন যুদ্ধকালীন সময়ের সেই ঘটনা গুলো ভুলে না যাই।
(আনোয়ার হোসেন: , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)