শিরোনাম

South east bank ad

শামীম আহমেদ এর কবিতা “টীকার সাথে অনুদান চাই”

 প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সাহিত্য

“টীকার সাথে অনুদান চাই”

শামীম আহমেদ

আমাদের ফ্লাইটটা ছিল নিউ ইয়র্ক -দুবাই- ঢাকা, আমিরাত এয়ার লাইন্স, আমেরিকা আসা যাওয়ার জন্যে আমার মতো যারা ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াত করেন তাদের জন্যে সবচেয়ে উত্তম আসন হচ্ছে একেবারেই পিছনের সিট । কারণ দুবাই থেকে নিউ ইয়র্ক আসা যাওয়ার জন্যে আমিরাত এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট হচ্ছে ডাবল ডেকার মানে দোতালা, পিছনের সিটে বসলে দোতালায় উঠার ল্যান্ডিংয়ের জায়গাটা ফাঁকা পাওয়া যায় এবং মাঝে মাঝে হাঁটা চলা করে একটু প্রশান্তিও পাওয়া যায়।

নিউ ইয়র্ক থেকে দুবাই আসার পর দুই ঘন্টার ট্রানজিট সময় পার করে যখন দুবাই ঢাকার ফ্লাইটে উঠলাম তখন মনে হলো ফাইভ স্টার হোটেল থেকে কোন “নাই তারকা”হোটেলে আসলাম । আমাদের সহ যাত্রী হিসেবে সৌদী থেকে আসা কিছু প্রবাসি ভাইয়েরাও উঠলো, তারা উঠার পর হৈচৈ দেখে নিশ্চিত হলাম যে আমরা বাংলাদেশগামী কোন ফ্লাইটেই উঠেছি । কেউ কেউ গরমের কারণে এয়ারলাইন্সের মা বাবা তুলে চরম ভাবে বাংলা ভাষায় গালা গালি শুরু করলো । কপাল ভালো এয়ার হোস্টেস বাংলা জানেনা ।
এয়ার হোস্টেস হাত মুখ পরিস্কার করার জন্যে সবাইকে ছোট্র রুমাল দিলেন কিছুক্ষন পরে ডাস্টবিন বক্স নিয়ে আসলেন রুমালটা নেয়ার জন্যে । আমার পাশের সিটে বসা প্রবাসী ভাই কোন মতেই রুমাল দিবেনা, ভাবখানা এমন দরকার হলে বিমানবালাকে বিমান থেকে ফেলে দিবে কিন্তু রুমাল না !
“আচ্ছা ভাইজান রুমালটা দিলেন না কেন?”
“ আরে ভাই জানেন না ওরা এই গুলা ফেরত নিয়া ধুইয়া বাইরে বেচে”
আমি তাহার জ্ঞানের প্রশংসা করলাম এবং উনি যে উচিত কাজটা করেছে বুঝানোর পর খুবই খুশী হলেন ।
“বুঝছেন ভাই আপনাদের মতো শিক্ষিত লোকরা অল্পতেই মানুষ চিনতে পারে ।”
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম । তার সাথে অনেক মসল্লা যেমন হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি এবং মজার ব্যাপার হলো সবই বাংলাদেশের প্রান কোম্পানীর ।কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “ভাই কস্ট করে সৌদী থেকে এতগুলো মসল্লা কিনে আনলেন কেনো ? বাংলাদেশেইতো পাওয়া যায়।”

ভদ্রলোক বিজয়ের হাসি হেসে বললেন “ ভাই বাংলাদেশ একটা ভেজালের দেশ যাই খান না ক্যান সবই ভেজাল, তাই বিদেশ থেইকা বেশী বেশী কইরা কিইনা লইলাম।”
কিন্তু ভাই এটা তো বাংলাদেশী কোম্পানীই ।
এইবার উনি বিরক্ত হয়ে বললেন “ ভাবছিলাম ভাই আপনি বুদ্ধিমান মানুষ, শিক্ষিত লোক হইয়া বেকুবের মতো একটা কথা কইলেন, Export quality লেখাডা দেখছেন ! উনারা যেইডা এক্সপোরট করে হেইডার মইধ্যে কোন ভেজাল থাকে না ।”
চেহারার বিরক্তিভাব ও পুর্বে বিমানবালাকে গালাগালির ধরন দেখে শুধু বললাম “ না ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন” ।
প্রচুর জ্ঞান বিতরন করার পরে খুশী হয়ে আমার কোয়ালিটি বিচারের জন্যে জিজ্ঞেস করলেন “ আপনি কি করেন?”
বললাম “ভাই আমি ব্যাংকে চাকুরী করি “
কত টাকা বেতন পাই, ডিপিএসের রেট কত, ব্যাংকে কিভাবে টাকা রাখা যায় ইত্যাদি ইন্টারভিউ শেষে তার মধ্যে কোন তৃপ্তি দেখলাম না ।
এয়ার হোস্টেসের দেয়া খাবার খাওয়া শেষে আমার বুদ্ধিমান ভাইটি যত্ন করে টিস্যু দিয়ে মুছে খাবারের সাথে দেয়া চামচ এবং পাত্রটা সযত্নে রেখে দিলেন ।

আমি বানিজ্য ও মানবিকে পড়া সামান্য একজন বেসরকারি চাকুরীজীবি করোনার টীকা নিয়ে কথা বলার মতো কোনো জ্ঞান বুদ্ধিই আমার নেই । তবে আমার ধারনা এই একই টীকা যদি ইন্ডিয়া থেকে তৈরী হয়ে জার্মান ঘুরে বাংলাদেশে ঢুকতো তাহলে আর কোনো সমস্যাই দেখা দিতো না। আমরা নিজ থেকে এবং বিভিন্ন ভিআইপিদের বক্তব্য থেকে বুঝে গেছি ইন্ডিয়া আমাদেরই দেশ অথবা আমরা আর ইন্ডিয়া একই তখন কেন জানি মনে হচ্ছে নিজের দেশের টীকার মান খুব একটা ভালো হবার না এবং যে কোনো সময়েই যে কোনো ধরনের ক্ষতি হতে পারে । তবে যদি এনজিও বা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দেয় যে করোনার টীকা নিলে ৫০০ টাকা দেয়া হবে এবং করোনার টীকা নেয়ার পর কারো ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নগদ দুইলক্ষ টাকা দেয়া হবে তাহলেই হয়তো আমরা বলবো “সরকার জিন্দাবাদ, নিন্দুকেরা নিপাত যাক”।

(শামীম আহমেদ, ব্যাংকার)

BBS cable ad

সাহিত্য এর আরও খবর: